ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও আমাদের নারীরা

মোহাম্মদ রায়হান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ৮ মার্চ ২০২১  
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও আমাদের নারীরা

‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারী অধিকার’- এক সময়কার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য। ঠকানোর দিন শেষ এগিয়ে যাবে নারী। দেড়শো বছরের ও পূর্বেকার নারীদের আন্দোলকে স্মরণ করেই আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। লিঙ্গ বৈষম্য থেকে শুরু করে সব অসামঞ্জস্যতাকে মাড়িয়ে বিশ্বের নারীদের পাশাপাশি আমাদের বাঙালি নারীরাও সমান তালে এগুচ্ছে। 

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশেষ এক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছরও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবসের শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। সেদিন আন্দোলনের অপরাধে গ্রেপ্তার হন অসংখ্য নারী। কারাগারে নির্যাতিতও হয়েছিলেন অনেকে। 

পরবর্তী সময়ে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় নারী শ্রমিক ইউনিয়ন। ১৮৫৭, ১৮৮০, ১৯০৮, ১৯১০ সালগুলোতে বিশ্ব ছিল নারী আন্দোলনের পূর্ণভূমি। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। সাথে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।  ১৯১০ সালের ৮ মার্চ ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। সে থেকে বিশ্বের নারীরা পায় নতুন গতি, নতুন প্রেরণা আর অনন্য এক ইতিহাস।

নারী দিবসের প্রেরণা নিয়ে বিশ্বের নারীরা রাতারাতি এগিয়ে গেলেও বাঙালি নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস কিন্তু সুপ্রাচীন নয়। বাঙালি নারীরা নব্বই দশক কিংবা পরবর্তী একুশ শতকে এসেও অনেকটা অনেকটা অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তাদের রয়েছে অনেকগুলো কালো অধ্যায়, কালো সময়। মনে আছে আমাদের? শুধু কি তাই? বিংশ শতকের প্রারম্ভে বাঙালি মুসলিম নারীরা ছিল সর্বক্ষেত্রেই কোণঠাসা। শিক্ষার সুযোগ ছিল না, না ছিল সামাজিক মর্যাদা। তখন অবশ্য আবির্ভূত হন নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। ঘরবন্দী নারীদের সব প্রকার সামাজিক মর্যাদা দানের জন্য তিনি নিরলশ ছিলেন।

তবে খুব বেশি নয়, অতিসম্প্রতি কয়েকটি বিষয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। যৌন হয়রানি তথা ইভটিজিং বাংলাদেশের নাগরীকদের কাছে অতিপরিচিত একটি অপরাধ। বিশেষ করে ২০০০-২০১৫ সালের ভেতরে ইভটিজিং শব্দের সাথে বাংলাদেশ দারুণ ভাবে পরিচিত হয়। এখনোও সব জায়গায় ঘটছে এই অপরাধ। তবে তা আরো আধুনিক রীতিতে৷ কিন্তু সচরাচর আমরা এবং আমাদের নারীদের সাহস হয় না এসব যৌন হয়রানিকারীদের জনসম্মুখে দেখিয়ে দেওয়ার। একে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। 

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নারীরা তাদের কিছু অন্তরঙ্গ বন্ধুর দ্বারা যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। কেবল ১৫-৪৯ বয়সী নারীদের যৌন হয়রানির স্বীকার হওয়ার সর্বোচ্ছ রেকর্ড রয়েছে-'ইথিওপিয়ায়' যার পরিমাণ ৫৮.৬ শতাংশ। অবাক হলেও সত্যি যে উক্ত রেকর্ডের ২য় স্থানে অবস্থান করে-" বাংলাদেশ। যার পরিমাণ ৪৯.৭ শতাংশ।  একই জরিপের ৪র্থ স্থানেও ৩৭.৪ শতাংশ পরিমাণ নিয়ে আলাদাভাবে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলকে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও ২০২০ সালের পূর্বেও দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি ১০ জন নারীর ভেতরে ৮ জন নারীই ধর্ষণের শিকার হন।

‘টাকা না পাইলে মিনুর সুন্দর মুখ আর সুন্দর থাকবো না’-বাংলাদেশ টেলিভিশনের এই সচেতনতা মূলক বিজ্ঞাপন যাদের আজও মনে আছে, তারা হয়তো এসিড নিক্ষেপের মতো অপরাধের কথা কখনোই ভুলবেন না। আজ থেকে প্রায় ১৫/২০ বছরের ভেতরেও এসিড নিক্ষেপ ছিল বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটা অভিশাপ  এবং ভয়ের সর্বোচ্ছ জায়গা। পুরো দেশের সব জায়গায়ই এসিড নিক্ষেপের ঘটনা অহরহ ঘটতো। এমন জরুরি মুহূর্তে তৎকালীন সরকার এই আইন প্রণয়ন করলো যে, এসিড নিক্ষেপের অপরাধ প্রমাণিত হলেই মৃত্যুদণ্ড এবং তার বিচার ৯০ দিনের ভেতরই শেষ করতে হবে। এর প্রায় ২ বছরের ভেতরই এই সমস্যাটা পুরোদমে দূর হয়ে যায়।

দেনাপাওনার হিসেবে নারীদের পণ্যে পরিণত করার একটা সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া ছিল-যৌতুক। খুব সহজে বললে বিয়ের সময় কনে কর্তৃক বর পক্ষকে কিংবা বর কর্তৃক কনে পক্ষকে কিছু মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী বা টাকা পয়সার আদান প্রদানই যৌতুক। ৯০ দশকেরও পূর্বের সময় থেকে এখনো যৌতুক প্রথার প্রচলন রয়েছে। যদিও যৌতুকে এখন আধুনিকায়ন ঘটেছে।  যৌতুকের দাবি দাওয়া ঠিক মতো পূর্ণ না করতে পারলে নববধূকে স্বামীর ঘরে অসহনীয় পীড়ার শিকার হতে হতো৷ 

সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবকিাশে যুগ যুগ ধরে নারী যে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে সেই ভূমিকার যথাযথ স্বীকৃতি এবং সার্বিকভাবে গোটা বিশ্বে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা স্থাপন করা৷ এ জন্য আইন প্রণয়ন, প্রচলিত আইনের সংস্কার, আইন প্রয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি সময়ের দাবি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়