ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কানাডায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের আদ্যোপান্ত

মো. মঈন উদ্দিন সাব্বির  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২৫ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৩:৫১, ২৫ মার্চ ২০২১
কানাডায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের আদ্যোপান্ত

উচ্চশিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের অধিক আগ্রহের দেশটির নাম হচ্ছে কানাডা। উত্তর আমেরিকার এই দেশটি বৃহৎ আয়তনের দিক দিয়ে সারাবিশ্বে রাশিয়ার পরেই অবস্থান। শিক্ষার মান, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, বাৎসরিক টিউশন ফি, আবাসন সুবিধা, শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ এবং শিক্ষাজীবন শেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগসহ অন্য বিষয়গুলো বিবেচনায় কানাডা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য অপার সম্ভাবনাময় দেশ। বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

যারা বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে ভাবছেন কিংবা কিভাবে শুরু করবেন আইডিয়া পাচ্ছেন না, তাদের জন্য আজ রয়েছে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত। 

কেন পড়বেন কানাডায়

কানাডা হচ্ছে বিশ্বের সপ্তম শান্তিপূর্ণ দেশ। এদেশের নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অন্ত নেই বললেই চলে। তাই এখানের জীবন ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের কাছে বেশ ঈর্ষণীয়। 

শিক্ষার মানের ব্যাপারে বলতে গেলে, QS Ranking কিংবা The Times Higher Ranking সব জায়গাতেই রয়েছে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠত্বের ছড়াছড়ি। গবেষণা ভিত্তিক পড়ালেখার মান অত্যন্ত উচ্চমানের হওয়ায় এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বিশ্বের যেকোনো দেশেই বেশ চাহিদা সম্পন্ন।

পড়ালেখা চলাকালীন পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া কো-অপারেটিভ পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি যেকোনো কানাডিয়ান কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ, এমনকি ফুলটাইম চাকরিও পাওয়া যায়। এসব থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে সহজেই শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারেন।

তাছাড়া মাল্টি-কালচার, সহজ ইমিগ্রেশন এবং শিক্ষা-পরবর্তী কাজের সহজ পলিসি থাকায় শিক্ষাজীবন শেষে চাকরিতে ঢোকার ৫ বছরের মধ্যেই রয়েছে স্থায়ী নাগরিক হওয়ার সুযোগ।

কোন কোন ডিগ্রি নিয়ে পড়া যায় 

এদেশে শিক্ষার্থীরা তিন ধরনের ডিগ্রিতে পড়ালেখা করতে পারেন। সেগুলো হচ্ছে– 

১. ফাউন্ডেশন বা কালচারাল কোর্স

২. আন্ডার-গ্র্যাড বা ব্যাচেলর ডিগ্রি

৩. পোস্ট-গ্র্যাড বা মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি

কী ধরনের প্রোফাইল প্রয়োজন

কানাডাতে পড়তে সাধারণত তেমন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। সাধারণ কিছু যোগ্যতা থাকলেই সেখানে সুযোগ পাওয়া যায়। তারপরেও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে-

পিএইচডি ডিগ্রির জন্য

১. দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, ২. মাস্টার্স ডিগ্রি সনদ (থিসিসসহ), ৩. ব্যাচেলর ডিগ্রি সনদ (থিসিসসহ), ৪. গবেষণা পত্র (যদি থাকে), ৫. উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, ৬. মাধ্যমিক সনদ, ৭. আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম (৬.৫), ৮. GRE স্কোর (সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজ্য নয়), ৯. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার, ১০. কর্মস্থল থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার, ১১. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (যেখানে এক্সট্রা কারিকুলার কাজগুলো উল্লেখ থাকতে হবে), ১২. সিভি

মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য

১. কাজের অভিজ্ঞতা সনদ (যদি থাকে), ২. ব্যাচেলর্স ডিগ্রি সনদ (থিসিসসহ), ৩. গবেষণা পত্র (যদি থাকে), ৪. উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, ৫. মাধ্যমিক সনদ, ৬. আইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে (৬.৫), ৭. রিকমেন্ডেশন লেটার, ৮. স্টেটমেন্ট অব পারপাস, ৯. সিভি

ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য

১. উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, ২. মাধ্যমিক সনদ, ৩. আইএলটিএস স্কোর ন্যুনতম (৫ .৫), ৪. কলেজের দু’জন শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার, ৫. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (কেনো পড়তে যাচ্ছেন, কেনো বিশ্ববিদ্যালয়টি পছন্দ হয়েছে উল্লেখ করতে হবে), ৬. সিভি

ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য

১. উচ্চ মাধ্যমিক সনদ, ২. মাধ্যমিক সনদ, ৩. আইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৫, ৪. কলেজের দু’জন শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার, ৫. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (কেনো পড়তে যাচ্ছেন এবং কেনো এ ই কোর্স পছন্দ করেছেন সেটা উল্লেখ করতে হবে), ৬. সিভি  

আবেদনের সময়

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত বছরের ফল সেমিস্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করিয়ে থাকে। তবে আন্ডার-গ্র্যাড কোর্সে আবেদনের সময়সীমা ফেব্রুয়ারি/মার্চ থেকে জুনের মধ্যভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর পোস্ট গ্র্যাড কোর্সগুলোতে আবেদনের সময়সীমা ডিসেম্বর/জানুয়ারি থেকে মার্চ অবধি হয়ে থাকে।

যে পরিমাণ খরচ হতে পারে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা নিয়মে তাদের টিউশন ফি ধার্য করে থাকে। দেশটির উত্তরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টিউশন ফি কিছুটা কম। সাধারণ হিসেব কষতে গেলে এদেশে ব্যাচেলর্স কোর্সে প্রায় ১৪-১৬ হাজার ডলার; মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্সের জন্য প্রায় ১০-১২ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হয়।

স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ 

কানাডা প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। তাছাড়া একাডেমিক রেজাল্টের উপরও শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই এসব স্কলারশিপের মাধ্যমে টিউশন ফি ছাড়াই ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় স্কলারশিপের নাম হচ্ছে –

১. ভেনিয়ার কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, ২. আইডিআরসি ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড, ৩. ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, ৪. রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট স্কলারশিপ, ৫. স্টেট স্কলারশিপ, ৬. প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ, ৭. ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ

শিক্ষার্থীদের মাসিক খরচ

কানাডায় ১০টি প্রদেশ রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে সাধারণত উত্তরের প্রদেশগুলোর তুলনায় মাসিক খরচ কিছুটা বেশি। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে লোক সমাগমও উত্তরের থেকে কিছুটা বেশি। এজন্য সেসব প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানীসহ অন্যান্য দক্ষিণ তীরবর্তী শহরগুলোও বেশ বড় এবং ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। জীবনযাপনের মান যেখানে ভালো, সেখানের খরচটাও একটু বেশি। গড় হিসাব করলে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ মোটামুটি ১০০০-১২০০ ডলারের কাছাকাছি, যা শিক্ষার্থীরা পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে সহজেই উপার্জন করতে পারেন।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা

Alberta University of the Arts, Athabasca University, McEwan University, Mount Royal University, University of Alberta, University of Calgary , University of Lethbridge, British Columbia,  Capilano University ,  University of British Columbia, University of Victoria, University of the Fraser Valley, University of Northern British Columbia, Vancouver Island University , Brandon University, University College of the North, University of Manitoba, University of Winnipeg, Mount Allison University, St. Thomas University, University of New Brunswick, Université de Moncton, Algoma University, Brock University, Carleton University, Lakehead University, Laurentian University, McMaster University, Queen’s University at Kingston, Royal Military College of Canada, Ryerson University, Université de l’Ontario français, University of Guelph,  Ontario Tech University, University of Ottawa, University of Toronto.

ঢাকা/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়