ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শত বছরের জন্য প্রস্তুত করতে হবে ঢাবিকে: ড. আখতারুজ্জামান 

ওয়াহিদ তাওসিফ (মুছা) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৭, ২৪ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:১৯, ২৪ জুলাই ২০২১
শত বছরের জন্য প্রস্তুত করতে হবে ঢাবিকে: ড. আখতারুজ্জামান 

প্রাচ্যর অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূতিকাগার নয়; বাঙালি জাতির জীবনে যা কিছু বড় বড় অর্জন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন- সবকিছুতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শতবর্ষের এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্ব স্থবির হয়ে যাওয়ায় ভিন্ন রূপরেখায় পালিত হয় বহু প্রত্যাশিত এই দিনটি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দীর্ঘ যাত্রায় শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, খাবারের মান উন্নয়ন, মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রকে এগিয়ে নেওয়া, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, বায়ো-রিসার্চ কার্যক্রম, গবেষণার ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তার মুখোমুখী হয়েছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ওয়াহিদ তাওসিফ (মুছা)। 

ওয়াহিদ তাওসিফ: কেমন আছেন?

ড. আখতারুজ্জামান: ভালো আছি।

ওয়াহিদ তাওসিফ: বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে করোনা বিষয়ক কোনো গবেষণা হয়েছে কি-না?

ড. আখতারুজ্জামান: হ্যা, কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড ল্যাব তৈরি করা হয়েছে গবেষণার জন্য। সেন্টার ফর এডভান্স রিসার্চ ইন সায়েন্সেস কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সংগঠিত বৈশ্বিক মহামারির ভয়াবহ সময়ে করোনাভাইরাস নির্ণয়ের জন্য বায়োলজিক্যাল হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস এবং হেলথ রিসার্চ ল্যাবরেটরি শীর্ষক একটি গবেষণা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। করোনা শনাক্তের জন্য ল্যাবটিতে এপর্যন্ত ৪০ হাজারের উপরে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. সিদ্দিক ই রব্বানীর তত্ত্বাবধানে একদল গবেষক কোভিড-১৯ এর বিস্তার প্রতিরোধকল্পে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে Negative pressure isolation canopy (NPIC) প্রস্তুত করেন। বিএসএমএমইউতে এই যন্ত্র প্রদর্শনকালে বিশেষজ্ঞরা একে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও সময়োপযোগী বলে অভিহিত করেন। করোনাক্রান্ত রোগীদের কারণে আইসিইউ ইউনিটে স্ব্যস্থসেবা কর্মীদের ঝুঁকি নিরসনে - pressurized air purifying respirator (PAPR) 
ডিজাইন তৈরি করা হয়।

ওয়াহিদ তাওসিফ: সেশনজট নিরসনে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কী? 

ড. আখতারুজ্জামান: কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হলেও অনলাইন ও অফলাইনের সমন্বয় আনার মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা হয়। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করে এবং অনলাইনে বা সশরীরে বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দীর্ঘ মেয়াদী সেশনজট রুখতে পারে। 

শিক্ষার্থীদের সেশনজটের ঝুঁকি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল প্রণীত- 'loss recovery plan' প্রণয়ন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সামগ্রীক ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে গঠিত একটি কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।

ওয়াহিদ তাওসিফ: করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে? 

ড. আখতারুজ্জামান: সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা না করা হলেও বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। 

ওয়াহিদ তাওসিফ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা গেছে কি-না?

ড. আখতারুজ্জামান: পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং টিকা কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিওিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে এবং সেই মোতাবেক কাজ চলছে। 

ওয়াহিদ তাওসিফ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৌলিক গবেষণা কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে?

ড. আখতারুজ্জামান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে আমাদের মূল টার্গেট হলো মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ। এছাড়া নতুন কিছু  পরিকল্পনা রয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্র ও পরিধি ক্রমান্বয়ে সম্প্র্রসারিত হচ্ছে। শতবর্ষে এসে এটি আমাদের মৌলিক দর্শন হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা বিশেষ বরাদ্দ পেয়েছি। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা-পরামর্শে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। শতবর্ষে এসে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে গবেষণার ক্ষেত্রে যে মোমেনটাম তৈরি হয়েছে, সেটা টেকসই রাখাই হবে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের গবেষক, আমাদের বিভাগ, ইনস্টিটিউট, গবেষণা কেন্দ্রগুলো তারা যে গবেষণা প্রকল্প জমা দিয়েছেন, আমাদের যে জার্নালগুলো আছে, সেগুলোর হালনাগাদ ও মান উন্নয়ন করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, এই গতিকে ধরে রাখতে হবে। একে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি আমরা।

ওয়াহিদ তাওসিফ: অনলাইন শিক্ষা ভবিষ্যতে কতটা সাফল্য বয়ে আনবে বলে আপনি মনে করেন? 

ড. আখতারুজ্জামান: অনলাইন শিক্ষা হলো মন্দের ভালো। শিক্ষা কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখা। যাতে কোনো শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে না থাকে।

ওয়াহিদ তাওসিফ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী দিনে কোথায় দেখতে চান?

ড. আখতারুজ্জামান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে যাবে। আমাদের জাতীয় জীবনে দুটি রূপকল্প আছে। একটি হলো ২০৪১ ঘিরে; আরেকটি ২১০০ সাল ঘিরে; ডেল্টা প্ল্যান। এ দুই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও কাজ করে যাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে এগিয়ে নেবে দেশকে। পরবর্তী একশো বছরের জন্য প্রস্তুত করতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। 
 
ওয়াহিদ তাওসিফ: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ড. আখতারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ। রাইজিংবিডির জন্য শুভকামনা।

ডিআইইউ/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়