ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্মৃতির পাতায় তাদের ক্যাম্পাস 

মো. ফাহাদ বিন সাঈদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৪:১২, ৩১ জুলাই ২০২১
স্মৃতির পাতায় তাদের ক্যাম্পাস 

গ্রীষ্ম গেলো, বর্ষা গেলো, শরৎ, হেমন্ত, শীত গিয়ে বসন্তও এলো বার বার, তবুও তোমার সঙ্গে (ক্যাম্পাস) দেখা হলো না। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, ল্যাব, ফিল্ড ওয়ার্ক, প্রেজেন্টেশন, খেলাধুলা— সবকিছু নিয়ে সবার ক্যাম্পাস জীবন ভালোই যাচ্ছিল। হঠাৎ প্রাণঘাতী করোনার থাবায় এলোমেলো হয়ে গেলো সবকিছু। দেড় বছরের বেশি হতে চললো প্রিয় ক্যাম্পাস ও বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব। দিন দিন স্মৃতির পাতাও হচ্ছে ফিকে।  শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমন সব বিলাপ। সেগুলো তুলে ধরেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মো. ফাহাদ বিন সাঈদ।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন মোহনা। তিনি বলেন, ইট-পাথরের যান্ত্রিক রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রকে অলঙ্কৃত করে আছে ৮৭ একরের শেকৃবি, এ যেন এক ছোট্ট গ্রাম। যা বাংলাদেশ ও  দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীণতম কৃষি শিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান।  যেখানে দেখা মেলে সবুজ সমারোহের, শীতের শিশির ভেজা ঘাসের সবুজ গালিচাকে পাহারা দেয় ছায়াঘেরা দেবদারু, আর অপর পাশে নানা রঙের পাতাবাহার। মাঝখান দিয়ে বেড়ে চলেছে ধুলোমাখানো পিচে ঘসা রাস্তা। যে রাস্তা গল্প বলে কৃষিবিদ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্লাসরুমের কোলাহলের পথে পা বাড়ানো একঝাঁক শেকৃবিয়ানের। আমিও আজ এই স্বপ্নবাজদের একজন। 

কিন্তু মহামারির বিষাক্ততায় ছন্দপতন ঘটেছে এই ৮৭ একরের প্রাঙ্গণে। দীর্ঘ দেড় বছরের দূরত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা মায়ার বাঁধন তৈরি হয়েছে এর আঙিনায়। 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. শুভ ইসলাম বলেন, অপরিচিত জায়গাটা পরিচিত হয়ে উঠলো, বেশি সময় নিলো না, আবারও অপরিচিত। ক্যাম্পাসে রাতভর গানের আড্ডা, চক্রবাক ক্যাফের খাবার, জয় বাংলা ভাস্কর্যে বসে গলা ছেড়ে গান, চিকনার পেঁয়াজু, চাঁদের হাটের 'চা'। 

জ্ঞানের গোলি আর ট্রামপুলের মামাদের 'চা' সাথে ভাইরালের বার্গার তো আছেই। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিলো জায়গাটা আমার বহু চেনা। অপরিচিত ক্লাস রুমটাকেও ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তেই।  কত রাত যে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে, সকালের সূর্য দেখে ঘুমিয়েছি। দীর্ঘ বন্ধে এখন এইগুলো কেবল স্মৃতির পাতায় জমে আছে। ক্যাম্পাসে পরিবার না থাকলেও সিনিয়র ভাই/আপুদের ভালোবাসা আর ব্যাচমেটদের সাথে বন্ডিং যেন পরিবারের থেকেও বেশি। এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি। সব হারিয়ে এখন আমার নিজের বলতে একটা ক্যাম্পাসই আছে। আমার ক্যাম্পাসটাকে আমি ভীষণভাবে মিস করি। আবারও ফিরতে চাই নজরুল তীর্থে। পেতে চাই সবার ভালোবাসা। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মাহিনুর রহমান নায়িম বলেন, শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বছরজুড়ে পর্যটক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন কেন্দ্র হয়ে ওঠা ক্যাম্পাস আজ যেন অদৃশ্য অশুভ শক্তির খপ্পরে! তাই তো আমাদের রক্ষার্থে দূরে সরিয়ে রেখেছে। এখন আর সিনিয়রদের সাথে গল্প করা হয় না। মুক্ত মঞ্চে কোনো কোলাহল হয় না। সবাই মিলে চড়ুইভাতি কিংবা ভ্রমণ আনন্দ উপলব্ধি করা হয় না। 

শেষ বিকেলে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সাথে বন্ধুদের আড্ডা জমে ওঠে না৷ নিস্তব্ধতা যেন নিত্যসঙ্গী। তবে আবার দেখা হবে নতুন অধ্যায়ে। থাকবে না কোনো দুষ্টু শক্তি। হৃদয়ের মাঝখান থেকে আবার তোমার সাথে আবার দেখা হবে সুস্থ পৃথিবীতে। আবার হয়ে উঠবো মিলনমেলায়। তত দিন নিজের খেয়াল রেখো আমার ক্যাম্পাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামা নিশাত বলেন, ইট-কাঠ-পাথরের সাথে ভালো সম্পর্ক করে ফেলেছিলাম। এখনও মনে পড়ে, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে সকাল ৮টার ক্লাসের জন্য হল থেলে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হওয়া। ক্যাম্পাসের বটতলা আর টিএসসি আমার সবচেয়ে পছন্দের। গান গেয়ে কত সময় পার করেছি এখানে! আহা! কি ছিল সেই সময়। করোনা এসে হুট করে বন্ধ করে দিলো। 

ছুটিতে চলে আসলাম বাড়িতে। কে জানত? আর ফেরা হবে না এখানে। ঘরবন্দী এ জীবনে এখন বাসায় বসে স্মৃতিচারণ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু করোনা আমার ক্যাম্পাসের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ঠিকই, এর সাথে দেড় মাসে থেকেই আমি আমার ক্যাম্পাসকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। দেড় মাসের এই স্বল্প সময়ের ভালোবাসা গ্রহণ করবে কি তুমি?

মল চত্বর, সমাজবিজ্ঞান চত্বর, প্রেম চত্বর, সবুজ চত্বর, হাকিম চত্বর, চারুকলা, কলা ভবন, জামতলা, টিএসসি জায়গাগুলো খুব মিস করি। বেশিকিছু লিখতে পারার মতো স্মৃতি নিয়ে আসতে পারিনি। তবুুও বলি। ভালো থাকুক প্রাণের ক্যাম্পাস। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈমা মুন বলেন, চোখের পাতায় ক্যাম্পাসের দিনগুলো যেন স্বপ্নের মতো ছিল। এর মধ্যে মনে পড়ে যায়, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের খেলার টুর্নামেন্টের সেই দিনগুলোর কথা যার সবকিছুই অনেক মজার ছিলো। ভোর বেলা যখন সবাই খেলা প্র্যাকটিস করতো, আমরা তাদের দেখে শিখতাম আর মাঝে মাঝে নিজেরাও একটু আধটু চেষ্টা করতাম। এভাবেই আনন্দ মজার সাথে খেলা চলতে চলতে আমরা একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলাম। 

অতঃপর আসলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। চারদিকে টান টান উত্তেজনা, কারণ আমাদের বিপরীত দল টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সবাই অধীর আগ্রহের সাথে খেলা দেখছিলাম আর নিজেদের ডিসিপ্লিনকে উৎসাহিত করছিলাম। যদিও খেলাটায় আমরা জিততে পারিনি, তবে এই খেলাটাকে ঘিরে আমাদের মধ্যে অসংখ্য স্মৃতি রয়ে গিয়েছে।

জাককানইবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়