দুই হাত নেই, পায়ের সাহায্যেই সুশিক্ষিত হতে চান জব্বার
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি মানুষের নাকি তিনটি হাত। দুটি বাস্তবিক হাত, তৃতীয়টি অদৃশ্য হাত। যার নাম অজুহাত। এই তৃতীয় হাতটি থাকার কারণেই মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত কাজে সফল হতে পারে না। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
কিছুক্ষেত্রে এর ভিন্নতাও লক্ষ্য করা যায়। তিনটি হাতের কোনোটি না থাকলেও মানুষ সফল হয়। এমনি এক বাস্তব দৃশ্য দেখা গেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে। শনিবার (২৭ মে) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জিএসটি’র ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ছুটে এসেছেন লাখো শিক্ষার্থী। এতো শিক্ষার্থীর মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন পাবনার জব্বার আলী। দুই হাতেরই প্রায় সম্পূর্ণ অংশ না থাকলেও জব্বার আলীর রয়েছে তুমুল আত্মবিশ্বাস। আর তাইতো হাতের অল্প অংশ ও পা দিয়ে লিখেই গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে জব্বার চান্স পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও।
পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার বাসিন্দা জব্বার আলী। বাবা-মা ও চার ভাই-বোন নিয়ে তার পরিবার। জন্মের সময় থেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় আল হেরা কলেজ থেকে অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৫। এসএসসিতেও পেয়েছেন ৪.৬৭। আজ কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে চান্স পেয়েছেন তিনি।
আজকের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে জব্বার বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আজকের পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আমার লিখতে কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি হাত ও পা উভয় দিয়েই লিখতে পারি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সি’ ইউনিটে চান্স পেয়েছি। ইনশাল্লাহ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়ও ভালো করবো।
শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এতটুকু পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন ভালো করে পড়াশোনা করে ভালো একটা চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আমি এই উদ্দেশ্যে পড়ছি না। আমি চাই নিজেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলতে। আর সেইসঙ্গে আমার মতো যাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আছে, তাদেরও আমি পড়াশোনা করে দেখিয়ে দিতে চাই। তাদের জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যেতে চাই।
জব্বারের বাসা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দীর্ঘ দূরত্ব হলেও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জব্বার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন। নিজেকে সুশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলবেন।
হাবিবুর রহমান/ফিরোজ
আরো পড়ুন