ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

দাবি না মানায় বুটেক্স শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন

বুটেক্স সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ১ অক্টোবর ২০২৪  
দাবি না মানায় বুটেক্স শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত সংস্কারে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত দাবিগুলো না মানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-ল্যাব-পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এ বর্জন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

এর আগে, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭, ৪৮ ও ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি দিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন। অনতিবিলম্বে তাদের দাবিগুলো মেনে না নিলে ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেন তারা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামানের কাছে বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ ২০টি কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রত্যেক কমিটির আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো কমিটিই এখনো অর্পিত দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারেনি।

এর মধ্যে অন্যতম ছিল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা চালু সংক্রান্ত কমিটি। কমিটির কিছু কাজ দৃশ্যমানও হয়েছিল। কিন্তু প্রতিনিধিদের দাবি, সংশ্লিষ্টরা দিনের পর দিন তাদের আশ্বাস দিয়ে আসলেও দাবি আদায় আর হচ্ছে না এবং বারবার উপাচার্যসহ বিভিন্ন শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেও তারা কোনো ফল পাচ্ছেন না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং অন্যান্য কমিটির দৃশ্যমান ফলাফল না দেখায় সোমবার রাতে ব্যাচভিত্তিক ক্লাস-ল্যাব-পরীক্ষা বয়কট ও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কোনো কমিটিই তাদের কাজ পূর্ণ করতে পারেনি। এখনো সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা চালু নিয়ে বারবার মিটিং করার পরও কোনো সমাধানে আসা যায়নি। আমাদের হস্তক্ষেপে নিজ নিজ বিভাগের প্রধান ও ডিনের কাছ থেকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সাপ্লিমেন্টেরর ব্যাপারটা ফরওয়ার্ড করেছি এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পাশও হয়ে যায়। কিন্তু সিন্ডিকেট মিটিংয়ে কেনো এ ইস্যু তোলা হলো না?

তারা আরও বলেন, আমরা এতদিন শ্রদ্ধার জায়গা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তার কাছ থেকে আমরা কিছু প্রশ্নের জবাব চাই। সিন্ডিকেট মিটিং আয়োজন করা একজন উপাচার্যের অন্যতম দায়িত্ব, সেখানে এজেন্ডা তুলে পাশ করানোও দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেখানে তিনি ব্যর্থ।

এ সময় সরকার পতনের পূর্ববর্তী সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে উপাচার্যের অবস্থান ও শিক্ষার্থীদের নাম ডিবিতে দেওয়ায় সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করার ঘটনা উল্লেখ করে ‘ভিসির পদত্যাগ আমরা কেন চাইবো না?’ প্রশ্নের জবাব চান শিক্ষার্থীরা।

সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার কমিটির শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মাহিন সাফা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে একটি সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা কমিটি করা হয়। কমিটির দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে একটি খসড়া প্রস্তাবনা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে উঠানো হয় এবং সেখানে পাশও হয়ে যায়। পরবর্তীতে তা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উঠানোর কথা, যা বাস্তবায়ন হয়নি। ইতোমধ্যে সব ব্যাচের ফলাফল প্রকাশ হয়ে গেছে। অন্যদিকে সাপ্লিমেন্টের যে দাবি ছিল, তার কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তাই আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরবো না।

মুজাহিদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের নাম ডিবিতে দেওয়া, আওয়ামী লীগের গোলামী করা, ২০টা কমিটির একটাও বাস্তবায়ন না করা, সাপ্লিমেন্ট অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পাশ হওয়ার পরও সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পাশ না করানো ইত্যাদি কারণে উপাচার্য ব্যর্থ। জবাবদিহিতায় নিজ পক্ষের শিক্ষার্থী এনে আমাদের হেনস্তা করে পার পেয়েছেন। তিনি আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসবেন না বলে জানিয়েছেন, তিনি গেইট থেকে শফি ভাইয়ের নাম সরাতে ব্যর্থ। ১৮ জুলাই যেখানে ছাত্ররা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, সেখানে ৪ আগস্ট কীভাবে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতিকে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে মিটিংয়ে ডাকেন? এতকিছুর পরেও তার পদত্যাগ আমরা কেনো চাইবো না? এর উত্তর উপাচার্য স্যার নিজে দিবেন। 

পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করতে হবে এবং গঠিত ২০টি কমিটির আপডেট জানাতে হবে। এ সবের জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হলো।

/সাজ্জাদ/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়