ঢাকা     শনিবার   ১৫ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ২ ১৪৩১

বাকৃবিতে এক শিক্ষার্থীকে একাধিকবার বহিষ্কার

বাকৃবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   আপডেট: ২২:৪০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বাকৃবিতে এক শিক্ষার্থীকে একাধিকবার বহিষ্কার

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থীকে বারবার বহিষ্কার ও শাস্তি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের স্বচ্ছতা ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্ন উঠেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হল ফিস্টের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণামূলক গান বাজানোর ঘটনায় কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি এডিশনাল রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

এরপর কোনো আপিল বা দরখাস্ত ছাড়াই গত বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রয়ারি) হল প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখানে তাকে হল থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈন জানান, ওইদিন শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান চলছিল। গানগুলোও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাই বাজিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। গানা বাজানোর ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা না থাকার পরেও হল প্রাধ্যক্ষ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তাকে হেনস্থা করার জন্য এসব কাজ করছেন।

ভুক্তভোগীর প্রশ্ন রেখে জানান, হলের অনুষ্ঠানে গান বাজাচ্ছিলেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। আওয়ামীলীগের গান বাজানোর ওই ঘটনায় কেন একমাত্র তাকেই শাস্তি দেওয়া হলো?

হল প্রভোস্টের সাথে ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রদল নেতার সঙ্গে তার সুসস্পর্ক রয়েছে। এদিকে ছাত্রদলের আরেক নেতা শাহজালাল হলে প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টায় আছেন। এ কারণেই ওই শিক্ষার্থীকে হল থেকে সরানোর জন্য এমন কাজ করছেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান। বারবার এভাবে শাস্তি দেওয়া ও পরিবর্তনের ঘটনাকে প্রশাসনের অন্যায্য ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগী। 

শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার মো. সারওয়ার জাহান বলেন, “এখানে প্রশাসনিক কিছু ত্রুটি ছিল। হলভিত্তিক সমস্যায় প্রাধ্যক্ষই সবকিছু নির্ধারণ করেন। এ কারণেই প্রথমে শিক্ষার্থী আজমাঈন হাসান মাঈনকে একাডেমিক বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষ পরবর্তীতে তার বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন।”

শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, “ওই শিক্ষার্থী যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার ওই গানটি বাজাচ্ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তবর্গ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে প্রথমে তার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাস্তি কিছুটা কমিয়ে তাকে হল থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রথম বর্ষের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।”

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার হলের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ কেন থাকবে? এ রকম হলে তার শাস্তি কমানোর বিষয়ে আমরা ভাবতামই না।”

গত বছর ২৬ ডিসেম্বর বাকৃবির শাহজালাল হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত একটি ফিস্টে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রচারণা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে অস্তিরতা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয় এবং কেউ ইচ্ছে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার পায়তারা করছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। শিক্ষার্থীরা সে সময় প্রশাসনকে বলেছিলেন, তারা ব্যঙ্গ করার উদ্দেশ্যে গান বাজিয়েছে।

ঢাকা/লিখন/মেহেদী


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়