কাজ ছাড়াই বেতন নেন বেরোবির রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী
বেরোবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো কাজ ছাড়াই বেতন ভাতা উত্তোলন করেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১২ মার্চ) রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে অভিযান পরিচালনা শেষে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক হোসেন শরীফ এ কথা জানান।
এর আগে, ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসারদের বিরুদ্ধে অফিসে অনিয়মিত এবং কাজ ছাড়াই বসে বসে প্রতি মাসে বেতন পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে রাইজিংবিডি ডটকমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। এরপর দুদকের রংপুর অফিস থেকে হোসেন শরীফের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল অভিযান পরিচালনা করেন।
সহকারী পরিচালক হোসেন শরীফ বলেন, “সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জলিল মিয়ার ইচ্ছায় ২০০৯ সালে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর এখানে তিনি কয়েকজন রিসার্চ অফিসারসহ মোট ২০৫ জন ফেলো ভর্তি করান। কিন্তু এর কোনো অনুমোদন ও নীতিমালা না থাকায় ওই ফেলোরা আর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেনি।”
তিনি বলেন, “ইনস্টিটিউটের ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো কাজ ছাড়াই বেতন ভাতা উত্তোলন করেন বলে জেনেছিলাম। এখানে আমি অভিযান চালিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়েছি। আমরা এই রিপোর্টগুলো কমিশনে প্রেরণ করব, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।
গবেষণার জন্য অনুমোদন না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়া নিজের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীলকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই এ ইনস্টিটিউটে গবেষক ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন বলে কথিত আছে। এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন। তখন ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
ফলে ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরতরা বসে বসেই বেতন পান। কাজ না থাকায় অফিসেও নিয়মিত দেখা যায় না তাদের।
ইনস্টিটিউটে সর্বমোট সাতজন কর্মকর্তা, একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএসএস কর্মরত আছেন। এর মধ্যে রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামানের গবেষণা কার্যক্রমে তেমন না থাকলেও সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির রাজনীতিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই অফিসারদের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কোনো কর্মকর্তারই গবেষণা নেই। গবেষণা বিষয়ক ওয়েবসাইট রিসার্চ গেইটে মাত্র ড. প্রসন্নজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েমের গবেষণা সংক্রান্ত ২-১টি প্রবন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয় যোগদানের পর জানতে পারি, এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক আমি নিজে। পরে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট সম্পর্কে খোঁজ খবর নেই।”
তিনি বলেন, “প্রথম দিকে এর অনুমোদন ছিল না। ২০২৪ সালের মে মাসে এর অনুমোদন দেওয়া হলেও নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে নীতিমালা তৈরি করার জন্য কাজ করছি।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী