ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাকসু: দীর্ঘ ৩৫ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটাবে যে নির্বাচন

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ২৮ জুলাই ২০২৫  
রাকসু: দীর্ঘ ৩৫ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটাবে যে নির্বাচন

ফাইল ফটো

দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আবারো সচল হতে চলেছে।সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

এ ঘোষণার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসে।

আরো পড়ুন:

প্রতিষ্ঠা ও সোনালী অতীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। এর মূল লক্ষ্য ছিল- বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাকসু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে সব স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাকসু ছিল শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের সোনালী অর্জনগুলোর পেছনে ছাত্র সংসদগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।

নির্বাচন ও নেতৃত্ব

রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২১ জন প্রতিনিধিকে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাকসুর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচন ‘রাসু’ নামে অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৬২ সাল থেকে এটি ‘রাকসু’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

স্থবিরতা ও বিরতি

বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের কারণে রাকসু নির্বাচন স্থগিত ছিল। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কারণে এবং পরবর্তীতে সামরিক শাসনের কারণে ১৯৭৫-১৯৮০ এবং ১৯৮১-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাকসু অচল হয়ে পড়ে আছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষার্থীদের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। এতে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাবির ১৪তম উপাচার্য হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি দায়িত্ব নেওয়া পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা মেনে নিয়ে রাকসু নির্বাচন নিয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করে।

তবে উপাচার্য সদিচ্ছা প্রকাশ করলেও রাকসু সচলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্দোলন করে আসছিলেন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। অবশেষে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই দীর্ঘদিনের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩১ জুলাই আচরণবিধি প্রকাশ, ৬ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৭ ও ১০-১২ আগস্ট ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৪ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এছাড়া ১৭-১৯ আগস্ট মনোয়নপত্র বিতরণ, ২১ ও ২৪-২৫ আগস্ট মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৭-২৮ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই, ৩১ আগস্ট প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাবির সব আবাসিক হলে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, “রাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে আমরা ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সূচনার পথে অগ্রসর হচ্ছি।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়