ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৮ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ২৩:২৬, ২৮ জুলাই ২০২৫
৩৫ বছর পর রাকসু তফসিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে অবশেষে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের গত সেপ্টেম্বরের প্রতিশ্রুতির প্রায় ১০ মাস পর আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন:

এই ঘোষণাকে শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেও, মূলত স্বস্তি ও নতুন প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। তারা এই তফসিল ঘোষণাকে একটি ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। 

শিক্ষার্থী সমাজকর্ম বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আলফাজ উদ্দিন টনিক বলেন, “৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে আমি একটি ঐতিহাসিক ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখি। এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার পথ খুলে দিয়েছে।”

তিনি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং সকল ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। তার মতে, “নির্বাচন যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়, বরং বাস্তব কার্যকারিতাও থাকে। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব গড়ে ওঠে।” তিনি বিভেদ নয়, একতা ও দায়িত্বশীলতার রাজনীতির আহ্বান জানিয়েছেন।

সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সাজিব এই ঘোষণাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক চর্চার সূচনা হিসেবে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি মনে করেন, “এই ধারা অব্যাহত থাকলে জাতীয়ভাবে রাবির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। রাকসুর প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। নির্বাচন কমিশন তফসিল অনুযায়ী সবকিছু আয়োজন করবে এবং সব সংগঠন প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।”

শিক্ষার্থীদের অধিকার ভিত্তিক সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর সভাপতি সালমান সাব্বির তফসিল ঘোষণাকে একদিকে আনন্দের এবং অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের ছাত্র সংসদ কার্যকরের অন্যতম দাবি বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো হিসেবে দেখছেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সময় ও বাস্তবতা বিবেচনা করেই প্রতিটি তারিখ নির্ধারণ করেছে। আমার প্রত্যাশা, নির্বাচন কমিশন যেন তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে।”

তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও দাবি উঠে এসেছে। 

রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী এই তফসিল ঘোষণাকে ‘সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের নতুন অধ্যায়’ এবং ‘ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এনসিপি-শিবির ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের দাবি-প্রস্তাবনা প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান না করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। রাবি প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন এনসিপি-শিবিরের গোপন কাগজপত্র ছাড়া কোনো কিছু দেখতেই রাজি নয়। এটি ফরমায়েশি তফসিল।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল আবাসিক হলে ভোট কেন্দ্র না করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আবাসিক হলে ভোট কেন্দ্র হলে একদলীয় আধিপত্য বাড়বে, যার প্রমাণ বিগত ডাকসু নির্বাচন। তিনি হল কেন্দ্রিক ভোটারদের বিভ্রান্ত করা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অর্থ ছড়ানোসহ সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

কিছু হল প্রাধ্যক্ষের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “প্রশাসন ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রশিবির’ ব্যতীত আর কারোর দাবি দাওয়াই কর্ণপাত করছে না, যা একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাকসু আয়োজনের অন্তরায়। অবিলম্বে রাকসুর ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপন করতে হবে।”

তবে ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নওসাজ্জামান তফসিল ঘোষণাকে রাবি শিক্ষার্থীদের অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষিত রাকসুর কার্যক্রম অর্ধধাপ এগিয়ে গেছে বলে মনে করছেন।

তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে রাবি শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার পাবে।” তিনি জুলাইয়ের অন্যতম দফা বাস্তবায়নে সফল হওয়ায় সকল শিক্ষার্থী এবং রাবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে আমরা ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সূচনার পথে অগ্রসর হচ্ছি।”

এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “বেটার লেইট দেন নেভার। সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। আশা করি, তিন যুগ পর এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে একটা চমৎকার ছাত্র সংসদ পাবে।”

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এখন সকলের দৃষ্টি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের দিকে, যখন নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়