জবিতে বাস সংকট চরমে, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান ভরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিস। তবে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কারণে সেই ভরসাই শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। নষ্ট বাস, অতিরিক্ত যাত্রীচাপ, যাত্রী তুলতে গিয়ে বাস বিকল হয়ে যাওয়া—এসব যেন প্রতিদিনের বাস্তবতা।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) জবি থেকে সাভারগামী ‘বংশী’ বাসটি পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। এতে ওই এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট, এবং দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা সীমিত হওয়ায়, বিশেষ করে মাত্র একটি ছাত্রী হল থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী পুরান ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাসে যাতায়াত করেন। বর্তমানে প্রায় ৩১টি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করলেও এর মধ্যে অনেকগুলোই কার্যত অচল অবস্থায় রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাসটি বন্ধ হয়ে গেলে তাদেরই ঠেলা দিয়ে ইঞ্জিন চালু করতে হয়। ‘বংশী’ বাসটি নিয়মিতই এমন সমস্যায় পড়ে। পূর্বের বাসটি নষ্ট হওয়ার পর নতুন বাস দেওয়া হলেও তাতে কোনো উন্নতি হয়নি। নতুন বাসের অবস্থাও একইরকম দুর্বল।
এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের প্রতিদিন সময় মতো ক্লাস বা পরীক্ষা থাকলেও বাস বিকল হওয়ায় সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে একই সমস্যা হচ্ছে।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে চাপে থাকে টেকনিক্যাল-ধানমন্ডি ১৫-জবি রুট। এ রুটে চলাচলকারী ‘দুর্জয়’ নামের দোতলা বাসে প্রতিদিনই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। যাত্রী চাপ সামাল দিতে অন্য রুটের বাস যুক্ত করা হলেও তা কার্যকর কোনো সমাধান নয়, বরং তা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে অন্যান্য রুটেও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থায় থাকা বিআরটিসির দোতলা বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘বংশী’, ‘দুর্জয়’, ‘উল্কা ১’, ‘স্বপ্নচূড়া’, ‘অনির্বাণ ১’ ও ‘উত্তরণ ১’। এই বাসগুলোর অধিকাংশই নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে এবং চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পরিচালক তারেক বিন আতিক বলেন, “পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাসগুলো মেরামতের কাজ সম্পন্ন হবে।”
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এমন আশ্বাস তারা আগেও বহুবার শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবে উন্নতি হয়নি। বাসগুলো কোনো মানদণ্ড ছাড়াই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নিত্যদিন ঝুঁকি নিয়ে এসব বাসে চলাচল করছি। অথচ বিকল্প বা টেকসই কোনো সমাধানের উদ্যোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের একটাই প্রত্যাশা, জরুরি ভিত্তিতে পুরনো বাস মেরামত এবং পর্যাপ্ত নতুন বাস সংযোজন। সেই সঙ্গে বিআরটিসি থেকে যেসব বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মানোন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত করতে হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী