ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইবি শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের সন্ধান দাবি

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২০, ৩০ আগস্ট ২০২৫  
ইবি শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের সন্ধান দাবি

দীর্ঘ ১ যুগ পেরোলেও সন্ধান মেলেনি আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসের। তাদের সন্ধানের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রশিবির।

শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ সময় ওয়ালিউল্লাহ ও আল- মুকাদ্দাসের সন্ধান, বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটালাইজেশন ও সাজিদ আব্দুল্লাহ’র হত্যার বিচারের দাবি জানান তারা।

আরো পড়ুন:

মানববন্ধনে ‘প্রশাসনের টালবাহানা, মানি না মানবো না’, ‘আমার ভাই গুম কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের খোঁজ, দিতে হবে দিয়ে দাও’, ‘মুকাদ্দাস ভাই নিখোঁজ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সেক্রেটারি ইউসুব আলী ও ওয়ালিউল্লাহ’র বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহসহ শাখা ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী।

গুমের শিকার শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহর বড় ভাই অধ্যক্ষ খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, “আমি ওয়ালি-মুকাদ্দাস দুইজনেরই বড় ভাই হিসেবে বলব, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় আসি তখন আমার পা চলে না, বুক কেঁপে উঠে, ক্যাম্পাসে আসার সময় আমি বাবা-মাকে বলে আসতে পারি না যে আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছি। কেউ যদি দোষীও হয়, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বিচার হোক শাস্তি পাক, কিন্তু এধরনের গুম-হত্যা একটি দেশের বড় হওয়া, সমৃদ্ধ হওয়াকে থামিয়ে দেয়।”

তিনি বলেন, “তৎকালীন প্রশাসনে যারা ছিল তাদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের কাজ কখনোই সম্ভব ছিল না। আমি এবং মুকাদ্দাসের চাচা গুমের বিষয়ে তদবির করেছিলাম মিডিয়ার ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম, প্রশাসনের ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম, তখন আমরা জানতে পেরেছি, তৎকালীন এখানকার স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যোগসাজশেই ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাসের গতিবিধি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল।”

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আজকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের একটি বছর হয়ে গেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের সন্ধান পাইনি। সরকার গুম কমিশন তৈরি করলেও সেটার কার্যকরি পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি।”

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় এ সরকার ঘুরিয়ে-পেচিয়ে ফ্যাসিবাদকে আশ্রয় দিচ্ছে। যেটা প্রতীয়মান হয়েছে, গতকাল নূরের উপর হামলার মাধ্যমে। যদি উপদেষ্টারা পদত্যাগ করেন তবে আপনারাও গুমের শিকার হতে পারেন। তাই আপনাদের অনুরোধ জানাই আমাদের ওয়ালিউল্লাহ-আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের সন্ধান দিন।”

তিনি আরো বলেন, “তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদেন ধরুন। তাহলে আমার মনে হয় অনেক কিছু বের হয়ে যাবে। আপনারা কেন ধরছেন না? কেন কুলুপ আটা আপনাদের মুখে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। প্রশাসনকে বলতে চাই ওয়ালিউল্লাহ-মুকাদ্দাস ভাইয়ের ব্যাপারে দ্রুত কথা বলুন। নইলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়া হবে।”

২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে কুষ্টিয়া ফিরছিলেন ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাস। পথিমধ্যে নবীনগর এলাকা থেকে র‌্যাব ও ডিবি পরিচয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয় তাদের। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী গুমের খবর অস্বীকার করে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ সরকারকে। তালিকায় ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের নাম আছে বলে জানা গেছে। তারা যথাক্রমে ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন অর্থ সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়