ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গোবিপ্রবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সনদ তুলতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৮:০৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গোবিপ্রবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সনদ তুলতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) ফলাফল ও সনদ তুলতে বাঁধা দেওয়ায় প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফার্মেসী বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আতিক ফয়সাল।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়লে প্রশাসনের ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় তার সহপাঠীরা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আতিক ফয়সাল বলেন, “গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্নাতকের ফলাফল প্রকাশ হয়। ফলাফল তুলতে গেলে প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের বাঁধা প্রদানের সম্মুখীন হই। এরপর সনদপত্র উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের ২৭ আগস্ট আমি প্রক্টর অফিসে ফর্ম জমা দিই। একইসঙ্গে আমার দুই সহপাঠীর ফর্মও জমা ছিল। কিন্তু পরে দেখি তাদের ফর্মে স্বাক্ষর হলেও আমার ফর্মে কোনো স্বাক্ষর হয়নি।”

তিনি বলেন, “অফিস থেকে জানানো হয়, প্রক্টর নিজে আমার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আমি বারবার প্রক্টর স্যারের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো উত্তর দেননি। ফলে দিনের পর দিন আমার ফর্ম প্রক্টরের কাছে আটকে আছে এবং পরীক্ষার সনদ ভুলতে পারিনি। আমার একটি চাকরির জন্য সিভি ও সনদের কপি পাঠানোর কথা থাকলেও আমি তা পারিনি। রেজাল্ট আটকে রাখার মতো নির্মম, নিষ্ঠুর ও মানবতাবিরোধী বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন তিনি।”

তিনি আরো বলেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর আবেদন করলেও এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ বা ব্যাখ্যা পাইনি। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি কখনো কোনো শৃঙ্খলাভঙ্গ বা অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হইনি, যার জন্য আমাকে ইতোমধ্যে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সদস্য আমাকে জানিয়েছেন, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা বোর্ডেও আমার বিষয়ে কোনো শাস্তি গ্রহণের সিদ্ধান্তও হয়নি।”

ভুক্তভোগী বলেন, “কোনো অবস্থাতেই আমার সনদ আটকে রাখা বা প্রযোজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর না করার নূন্যতম কোনো কারণ নেই। এখানে আরো বলে রাখা ভালো, যদি সর্বশেষ শৃঙ্খলা বোর্ডে কিংবা যেকোনো সমযে আমার বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও থাকে, তা পূর্ববর্তী কিছুর সঙ্গে এপ্লাই করার নূন্যতম কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ আমাকে যদি আজ বহিষ্কার করা হয়, তা পরবর্তী সেমিস্টার থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু পূর্ববর্তী পরীক্ষার সনদে সেটি এপ্লাই করার সুযোগ নেই। এমনকি ছাত্রত্ব বাতিলের মতো বিষয়ও যদি আসে, সে ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবার এক সেকেন্ড আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আইনগতভাবে আমার সনদ আটকে রাখার সুযোগ নেই।”

ভুক্তভোগী আরো বলেন, “আমি জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলাম এবং এ কাজের জন্য সে সময় থেকে আমার বিষয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজনের মেসেজও জুলাই আন্দোলনের সময় ফাঁস হয়, যারা আমাকে দেখে নিতে চান। আমি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা হিসেবে একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করেছি। সে সময় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সরব ছিলাম। সাম্প্রতিক হল ও একাডেমিক ভবনে ভাঙচুর নিয়েও প্রশাসনের গাফিলতি নিয়েও আমি সোচ্চার ছিলাম। ৩ কার্যদিবসে বিচার করতে চেয়ে ৩০ দিন পার হয়ে গেলেও বিচার দেখতে পাইনি। সেটি নিয়ে আমার মাথাব্যথাও নেই।”

“কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে ভাঙচুর, রক্তাক্ত করার ঘটনা, একাডেমিক ভবনে ভাঙচুর, বিভাগে ভাঙচুর, হলে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীর জিনিসপত্র বের করে অগ্নিসংযোগ, হত্যাচেষ্টা, মবসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও এমন গুরুতর কোনো বিষয়ে আমার নাম কোথাও নেই, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। অথচ এসব ঘটনায় জড়িতরা নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ালেও আমার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে,” যুক্ত করেন ভুক্তভোগী।

ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, “আমার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রশাসনিকভাবে সনদ উত্তোলনের ফর্ম আটকে রাখা হচ্ছে, যা চরম হয়রানিমূলক। শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরেও এভাবে পূর্ববর্তী পরীক্ষার সনদ কি আটকে রাখতে পারে? আমি এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দ্রুত আমার ন্যায্য অধিকার, অর্থাৎ অনার্স সনদপত্র উত্তোলনের সুযোগ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেন এমন হয়রানির স্বীকার না হতে হয় এবং এ ধরনের হয়রানি, জুলুম ও বৈষম্যমূলক আচরণ যেন প্রশাসন থেকে কেউ না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যাল্যয়ের প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, “সনদ আটকে রাখার কোন সুযোগ নেই। হয়তো সার্ভে করতে একটু দেরি হচ্ছে। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। দুই-তিন দিনের মধ্যে ওই শিক্ষার্থী তার সনদ পেয়ে যাবেন।”

ঢাকা/বাদল/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়