রাকসু নির্বাচন: ভোটের প্রচারে প্রার্থীদের অভিনব কৌশল
রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
পূজার ছুটির পর আবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ছুটি শেষে গত ৫ অক্টোবর খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়। আবারো জমে উঠছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার। প্রার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে একের পর এক ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল কৌশল। নির্বাচন যেন শুধু ভোটযুদ্ধ নয়, রীতিমতো এক উৎসব।
প্রচারে কেউ গাইছেন গান, কেউ সেজেছেন ঐতিহাসিক চরিত্র, আবার কেউ তৈরি করছেন ব্যতিক্রমী ডিজাইনের প্রচারপত্র।
ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর প্রচারর জন্য বেছে নিয়েছেন প্রজাপ্রতির অনুকরণে ডিজাইন করা লিফলেট। একই প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা প্রচারপত্র তৈরি করেছেন হাতের পাঁচ আঙুলের আদলে। একই দলের আরেক সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী সেজেছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বেশ।
শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জায়িদ হাসান জোহা প্রচারে সেজেছেন কৃষক, আর গাইছেন ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা গান।
আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার তৈরি করেছেন দৈত্যরূপী প্রচার পোস্টার। সাথে থাকছে ব্যঙ্গাত্মক প্রচারপত্র, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির আদলে ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
সহ-মিডিয়া সম্পাদক প্রার্থী নূর-নবী প্রচারপত্রে এনেছেন আবেগের ছোঁয়া মাকে সঙ্গে নিয়ে করছেন গণসংযোগ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নজর কেড়েছেন কাজী সফিউল কালাম (কেএসকে হৃদয়)। তিনি গান গেয়ে গেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রদল সমর্থিত এজিএস পদপ্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, “নির্বাচনে আমাদের অনেক ব্যালট নম্বর মনে রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে ইউনিক কিছু একটা করি। যেন শিক্ষার্থীরা মনে রাখতে পারে। আমার ব্যালট নম্বর যেহেতু পাঁচ, সেক্ষেত্রে আমি হাতের আদলে লিফলেট বানিয়েছি। সেখানে পাঁচটি আঙ্গুলের উপর আমি ইশতেহার দিয়েছি। অন্য পাশে বাসের সিডিউল দিয়েছি যেন শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে। এটা শিক্ষার্থীরা অনেক ভালোভাবে নিচ্ছে।”
কৃষক বেশে প্রচার চালানো শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, “আমি যেহেতু সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছি তাই ভেবেছি প্রচারে একটু বৈচিত্র্য আনার। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক যে বৈচিত্র্যগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন আমার প্রচারের মধ্যে উঠে আসে। এটাকে একইসঙ্গে অনেক মানুষের মধ্যে রিচ করা যাবে এবং সংস্কৃতিও ফুটে উঠবে।”
নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাজে প্রচার চালানোর কারণ জানতে চাইলে ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্মের সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী কাফী বলেন, “নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্রের কারণে পরাজিত হন। আজ আমি তার সাজে শুধুই প্রচার চালাতে আসিনি, এসেছি এক ধরনের প্রতিবাদের জায়গা থেকে।”
তিনি আরো বলেন, “মনে হচ্ছে, আমাদের বর্তমান সংস্কৃতির উপর আবারো কোনো লর্ড ক্লাইভের আক্রমণ নেমে এসেছে। সেই প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবেই আমি ভোটারদের কাছে এসেছি। যেন পলাশীর যুদ্ধে নবাব হেরে গেলেও, এই নির্বাচনে আমায় যেন তারা হারতে না দেন। নির্বাচিত হতে পারলে আমি ক্যাম্পাসে মুক্ত ও প্রগতিশীল সংস্কৃতির চর্চা আবারো জোরদার করতে চাই।”
প্রায় তিন যুগ পর আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত রাকসু নির্বাচন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী