ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তহবিল আত্মসাৎ ঝুঁকিতে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৭, ১৫ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৮:৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২০
তহবিল আত্মসাৎ ঝুঁকিতে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুরোধে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান, দুই পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সম্প্রতি কোম্পানির তহবিল তসরুপ ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে কমিশন। এ কারণে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের ব্যাংক হিসাব পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জব্দ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের বিষয়টি সুরাহার জন্য সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদসহ রেজিস্ট্রার্ড আফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বিএসইসি। সেখানে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাউকেই পায়নি এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গাজীপুরের কোনাবাড়ির বাইমাইলে ‘সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে কোনো রেজিস্টার্ড অফিস খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বুধবার (১৪ অক্টোবর) কোম্পানিসহ পরিচালনা পর্ষদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

সূত্র মতে, বর্তমানে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের নামে ৭টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ২টি, সিটি ব্যাংকে ৩টি এবং প্রাইম ও এনআরবি ব্যাংকে একটি করে ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এছাড়া সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের মোট ১০টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসানের নামে ইস্টার্ন ব্যাংকে ৪টি, পরিচালক হাসান মোহাম্মদ তানভিরের নামে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ২টি, ইউরো দেশ কনজুমার নামে (পরিচালক এনামুল কবির ও মো. নুরুদ্দিন দ্বারা পরিচালিত) আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ৩টি এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে (শহীদুল ইসলাম দ্বারা পরিচালিত) ১টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ২১ জুলাই সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান, দুই পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখতে বিএসইসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) কোম্পানির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

তথ্যমতে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্ষদ সভায় ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ। পরে ওই বছরে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডাররা অনুমোদন দেয়। এরপর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি লভ্যাংশ বিতরণ করেছে- এমন তথ্য নিশ্চিত করে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইকে চিঠি দেয় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ করেন, তারা লভ্যাংশ পাননি। ঘটনার সত্যতা পেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে সুহৃদের সব পরিচালকসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিও হিসাব জব্দ করে। পরে তাদের ব্যংক হিসাব জব্দ করা হয়। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের জুন মাসে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যা এখনও বিচারাধীন।

এ বিষয়ে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, গত ২১ জুলাই থেকে সুহৃদের ব্যাংক হিসাব জব্দ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়টি প্রতি মাসে রিভিউ করা হচ্ছে। লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালত থেকে সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকবে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রাইজিংবিডিকে বলেন, সময় মতো শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ায় সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিকের পরিচালকদের ব্যাংক হিসাব আগেই জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুনরায় বিএসইসি বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেনকে কেন্দ্র করে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের কারসাজি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে ডিএসই কোম্পানি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে কোম্পানির উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানির বর্তমানে অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৫৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৬৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এনটি/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়