লকডাউনের খবরে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক, লেনদেন বন্ধের দাবি
সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সোমবার (৫ এপ্রিল) এক সপ্তাহ লকডাউন দিয়েছে সরকার। এ খবরে রোববার (৪ এপ্রিল) দেশে উভয় শেয়ারবাজারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া অধিকাংশ শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে ব্যাপকভাবে পতন ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানিয়েছে, লকডাউন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার জন্য দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীরা জানান, চলতি গত বছরের মার্চে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা সঞ্চার হয়েছিল। যে কারণে বিগত কয়েক মাস আগেও শেয়ারবাজার অনেক ভালো অবস্থানে ছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীদের সেই আস্থার জায়গায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে।
এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে বিনিয়োগে নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত তারা। এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে সাইডলাইনে থাকতে চাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই অনেক বিনিয়োগকারী লেনদেন বন্ধ রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে, ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউনের খবরে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী আতঙ্কগ্রস্ত। তারা প্রতিনিয়তই ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার বিক্রির আদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক হলে তারা শেয়ারবাজারে পুনরায় বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন।
করোনা পরিস্থিতি অবনতির কারণে লকডাউনের মধ্যেও শেয়ারবাজার খোলা থাকবে বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে বিএসইসি। তারা জানিয়েছে, ব্যাংকিং কার্যক্রম খোলা থাকলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশপাশি কোনো ধরনের গুজবে কান না দিতে বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লকডাউনের খবরে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়েছে শেয়ার বিক্রি করছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে।’
চট্টগ্রামে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ইনভেস্টর্স ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাদের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই বাজার আরও খারাপ হওয়ার অশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা লোকসানে শেয়ার বিক্রি দিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে শেয়ারবাজার খোলা রাখা ঠিক হবে কি-না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
টাঙ্গাইলের মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী পলাশ কর্মকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কের মধ্যে আছি। বাজারের পরিস্থিতি অনেক খারাপ। চোখের সামনে বিনিয়োগ লোকসানে পরিণত হচ্ছে। তারপরেও শেয়ার বিক্রি করি নাই। অনেক বিনিয়োগকারী আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাই শেয়ারবাজার বন্ধ রাখা উচিৎ বলে মনে করছি।’
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লকডাউনের খবরে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ মুহূর্তে সস্তায় শেয়ার কেনার সুযোগ রয়েছে।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সায়েদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে চরম প্রভাব পড়ছে।’
প্রসঙ্গত, রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮১.৫৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫০৮৮.৯৮ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। অপরদিকে সিএসইর প্রধান সূচক সিএসইএক্স ৩২৪.৬৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮৮৭৮.৩৬ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
তানিম/সাইফ
আরো পড়ুন