ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঈদের আগে-পরে পজিটিভ পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিতে

নাজমুল ইসলাম ফারুক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১৭ মে ২০২১  
ঈদের আগে-পরে পজিটিভ পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিতে

দীর্ঘ এক যুগ পর এবারের ঈদের আগে ও পরে এক দিনের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা পদক্ষেপে ঈদের আগের ইতিবাচক ধারা ছুটির পর অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজারে। ফলে দীর্ঘ দিন পরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

সার্বিক এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্রমশ বাড়ছে। বাজারে লেনদেন ও সূচক নতুন রেকর্ড গড়ছে। তবে এমন বাজারে সতর্কতার সঙ্গে মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

গত এক যুগের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবারের ঈদের আগের কার্যদিবস বুধবার (১২ মে) বাজারে ১৪৫৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে, এই সময় সূচক ছিল ৫৭৫০ পয়েন্টে। ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৬ মে) বাজারে লেনদেন ২.৪২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪১৮ কোটি টাকা এবং সূচক ১.০৯ শতাংশ বেড়ে ৫৮১৩ পয়েন্ট অতিক্রম করে। যা ছিল পেছনের সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

তুলনা জানাচ্ছে, ২০২০ সালে ঈদের আগে ও পরের কার্যদিবসে লেনদেন কমেছিল ৫৮ শতাংশের বেশি। সেই বছর এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন ও কমেছিল ২৮ শতাংশের বেশি। টানা তিন বছরের মধ্যে লেনদেন এবারই সবচেয়ে কম হারে নেমেছে তবে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। 

২০১৮ সালের ঈদের আগে-পরে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন ইতিবাচক ধারায় থাকলেও সূচক ছিল নেতিবাচক। আর এর ঠিক আগের তিন বছর ঈদের এই সময়ে লেনদেন ছিল পুরোদস্তুর নেতিবাচক। ওই বছরগুলোতে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন যথাক্রমে ১৫ শতাংশ, ৪৪ শতাংশ এবং ৫ শতাংশের বেশি কমেছিল।  ২০১৪ সালে লেনদেন কিছুটা ইতিবাচক ধারায় থাকলেও সূচক ছিল নেতিবাচক। ২০১৩ সালে এই সময়ের বাজারে ছিল বিপরীত চিত্র। ২০১২ সালের লেনদেন ইতিবাচক থাকলেও আগের দুই বছরই ছিল নেতিবাচক। অর্থাৎ এক যুগের মধ্যে আট বছর লেনদেনের হার সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক থাকলেও এবারই তা ছিল সবচেয়ে কম। তাছাড়া এবার সূচকের উর্ধ্বমুখি গতিতো ছিলই। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগে ঈদের শুরুর সময়ে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে যেতো। ফলে পুঁজিবাজার অস্থির হয়ে উঠতো। আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্থ হতেন বিনিয়োগকারীরা। এবার দীর্ঘ দিন পর পুঁজিবাজারে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে। ঈদের আগে লেনদেন ও সূচকের যে গতি ছিল,  তা পরেও অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানা ইতিবাচক উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কারণে বাজারে গতি ফিরেছে। তবে এ বাজারে কোনো গুজবে কান না দিয়ে মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য পরামর্শ দেন তারা। 

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, অনেক দিন পর বাজারে ঈদের আগে ও পরে এক ধরনের স্বস্তিতে ছিল বিনিয়োগকারীরা। এটা ইতিবাচক দিক। তবে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, বাজারকে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান কমিশনের নানামুখি পদক্ষেপ ছিল, আছে। বিশেষ করে বর্তমান কমিশনের তৎপরতায় ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পর থেকে বাজারে গতি ফিরতে শুরু করেছে। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখি করতে, তাদের সুরক্ষায় আরও অনেক পদক্ষেপ বর্তমান কমিশন নিয়েছে। এসব কারণে দীর্ঘ দিন পর বাজারে ঈদের আগে ও পরে টার্নওভার (লেনদেন) ও ইনডেক্সে (সূচক) ধারাবাহিক উন্নতি ছিল। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি। 

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে কোনো গুজবে কান দেবেন না। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা গুজব ছড়ায় তাদের পাত্তা দিবেন না। মৌলভিত্তি শেয়ারে বিনিয়োগ করুন। 

বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ এক যুগের অধিকাংশ সময় ঈদের আগে ও পরে পুঁজিবাজার ছিল অস্থির। ফলে বিনিয়োগকারীরা হতো ক্ষতিগ্রস্থ। তাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা সৃষ্টি হতো। যার ফলে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতো বাজার। তবে দীর্ঘ দিন পর এবার ঈদের আগেও পরে পুঁজিবাজার ছিল স্থিতিশীল। যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল স্বস্তিদায়ক। এতে বাজারের প্রতি নতুন বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। এই উন্নয়নের ধারা যাতে কোনো অসত চক্র নষ্ট করতে না পারে সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অনেকেই মনে করেছিল অতীতের মতো এবার ঈদের আগে বাজারে লেনদেনে ধস নামবে। কিন্তু বর্তমান কমিশনের প্রচেষ্টায় সেটি হয়নি। একই সঙ্গে অনেকের ধারনা ছিল ঈদের পর বাজার খারাপ হয়ে যাব। কিন্তু সেসব ধারনা এবার ভুল প্রমানিত হয়েছে। আমরা মনে করি, বর্তমান কমিশনের সক্রিয় পদক্ষেপের কারণে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এ বাজারে যেন কোনো দুষ্ট চক্র ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে সব সময় কমিশন কঠোর হস্তক্ষেপ করবেন। এতে বাজার দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে আশা করছি।’ 

ঢাকা/এনএফ/এম এম 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়