ওটিসি’র কোম্পানি স্থানান্তরে মতামত চায় বিএসইসি
দীর্ঘ ১২ বছর পর বাতিল করা হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) আওতাভুক্ত ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট।
ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও সম্ভাবনা বিবেচনা করে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম (এসএমই) ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তর করা হবে।
এই কোম্পানিগুলো স্থানান্তরের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছে বিএসইসি। একইসঙ্গে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে খড়সা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই নীতিমালার ওপর মতামত জানাতে ডিএসই ও সিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ডিএসই ও সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ইলেক্ট্রোনিক শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থ রক্ষার্থে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২০এ এর ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে। লেনদেন, ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট, মানি অ্যাডজাস্টমেন্ট, মার্জিন, সার্কিট ব্রেকার, ডিপোজিটরি ফি, এবং চার্জ এবং অন্যান্য ছোট কোম্পানিগুলির ট্রেডিং শুরু করার জন্য স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড এবং স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাসঙ্গিক প্ল্যাটফর্ম বা বোর্ড থেকে ওটিসি কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত বা বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। খড়সা নীতিমালা অনুযায়ী এ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। এ চিঠি পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়ে যদি কোনো মতামত থাকে তা জানাতে বলা হয়েছে।
২০০৯ সালে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় ওটিসি মার্কেট। মূলত কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা ও সম্ভাবনা যাচাই করে এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া উৎপাদনে না থাকা, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, কাগুজে শেয়ার ডিমেট না করা, নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, লভ্যাংশ প্রদান না করা এবং সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন না করা কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেট থেকে ওটিসিতে শাস্তি স্বরূপ স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে কোম্পানিটি বা উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হলেও কার্যত শাস্তি পাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
তবে ওটিসি বাতিলে বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। কারণ ওটিসির কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিনিয়োগ আটকে রয়েছে। এমনকি ওই শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করতে পারছেন না। এখন দীর্ঘদিন পর গলার কাঁটা সরতে যাচ্ছে তাদের। বিএসইসিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বর্তমানে ডিএসই’র ওটিসি মার্কেটে ৬১টি ও সিএসই’র ওটিসি মার্কেটে ৪৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। ওইসব কোম্পানির মধ্যে প্রাথমিক ভাবে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মে উৎপাদন ও অনুৎপাদনে থাকা মোট ২৩টি কোম্পানি স্থানান্তরিত হবে। এর মধ্যে উৎপাদনশীল ৮টি ও অনুৎপাদনশীল ১৩টি কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে ১৯টি কোম্পানিকে স্থানান্তর করা হবে। আর তালিকাচ্যুত বা এক্সিট প্ল্যানের আওতায় রয়েছে ২২টি কোম্পানি। এ বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত নির্দেশনা জারি করবে বিএসইসি।
এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমি ভুঁইয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোকে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে স্থানান্তরের জন্য বিএসইসি একটি নির্দেশনা নিয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। এ সংক্রান্ত কোনো মতামত থাকলে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিএসইসিকে অবহিত করা হবে।’
এদিকে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে ওটিসির কোম্পানিগুলোকে স্থানান্তরের বিষয়ে বিএসইসির চিঠি পেয়েছি। চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি।’
ঢাকা/এনটি/এমএম