ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সাফকো স্পিনিংয়ের পর্ষদ পুনর্গঠন, বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১  
সাফকো স্পিনিংয়ের পর্ষদ পুনর্গঠন, বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ

লোকসানে রয়েছে শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলস। ব্যবসা না হওয়ায় টানা দুই বছর (২০১৯ ও ২০২০ সালের ৩০ জুন) ধরে লভ্যাংশ দিচ্ছে না কোম্পানিটি। এছাড়া, কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে কখনো শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। ধারাবাহিকভাবে বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের কারণে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৮৭.৩৯ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে সাফকো স্পিনিং মিলসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির পুরোনো উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে নতুন চার জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির সার্বিক আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সাফকো স্পিনিং মিলসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সেন্ট্রার ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এবং আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সাফকো স্পিনিং মিলসের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা হলেন, হাইকোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস. এম. মুনির, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়ালী উল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুমন দাস।

বিএসইসির মনোনীত নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকরা কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানিটির সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর, এফডিআরসহ কোনো কিছুর পরিবর্তন করতে পারবেন না। এছাড়া, স্বতন্ত্র পরিচালকরা ঋণ বা অন্য কোনো দায়ের জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেবেন না। তারা এসব কোম্পানির জন্য ঋণখেলাপি হবেন না।

এ সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি কোম্পানিটি ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করে কমিশন। নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন। ধারাবাহিকভাবে আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এদিকে, চলতি বছরের ৩০ মে লভ্যাংশ না দেওয়া ও ক্রমাগত লোকসানের কারণ জানতে সাফকো স্পিনিং মিলসের পরিচালনা পর্ষদসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করে বিএসইসি।

পাশাপাশি সম্প্রতি মো. মামুন অর রশিদ, মজিবুর রহমান ও মমিনুল ইসলাম নামে তিন বিনিয়োগকারী সাফকো স্পিনিং মিলসে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএসইসিতে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরপর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বোনাস শেয়ার দিয়েছে। মাঝখানে ২০১৫ সালে তারা বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। পরবর্তীকালে ২০১৯ ও ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করে। এর কারণ হিসাবে ব্যবসায় লোকসান হওয়ার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মনে করে, তথ্যটি সঠিক নয়। কোম্পানির দুটি ইউনিটই এখন পুরোদমে চলছে। সেখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ শ্রমিক কর্মচারী কাজ করছেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানে থাকার প্রশ্নই আসে না। কোম্পানি যে আর্থিক প্রতিবেদন দিয়েছে তা আমাদের কাছে স্বচ্ছ নয়। এটা নিজেদের ইচ্ছেমতো ও পরিচালকরা লাভবান হওয়ার জন্য করেছেন।

প্রসঙ্গত, সাফকো স্পিনিং মিলসের মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৪.৩৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৫.৬৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটি বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ ২৮.৩০ টাকায় সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারের লেনদেন হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়