ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৫২ ব্রোকারকে দ্রুত কার্যক্রমে আনতে ডিএসইকে নির্দেশ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৬ অক্টোবর ২০২১  
৫২ ব্রোকারকে দ্রুত কার্যক্রমে আনতে ডিএসইকে নির্দেশ

শেয়ার বেচাকেনা করা জন্য সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নতুন ৫২টি ব্রোকারেজ হাউজ বা ট্রেককে (ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) লাইসেন্স দিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন লাইসেন্স পাওয়া কোনো ব্রোকারেজ হাউজ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। এ পরিস্থিতিতে ব্রোকারেজ হাউজকে শিগগিরই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ডিএসইকে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

সদ্য ট্রেক লাইসেন্স পাওয়া ডিএসই’র ৫২টি ব্রোকারেজ হাউজকে শিগগিরই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসতে চায় বিএসইসি। এ লক্ষ্যে নতুন ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) স্থাপন এবং স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকার নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ডিএসইকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজারের পরিধি বাড়াতে নতুন ট্রেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এতে বাজারে বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারী দু’টোই বাড়বে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো জন্য নতুন ট্রেক সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ডিএসইকে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি উল্লেখ করেছে, অবিলম্বে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য ডিএসই ইতোমধ্যে ৫২টি ব্রোকারেজ হাউজ বা বা ট্রেককে লাইসেন্স ইস্যু করে হস্তান্তর করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ট্রেক লাইসেন্স প্রাপ্ত কোনো নতুন ব্রোকারেজ হাউস তাদের বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু করেনি। এ পরিস্থিতিতে নতুন জারি করা ট্রেক লাইসেন্সধারীদের অবিলম্বে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য ডিএসইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। এ চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হলো।

এ ছাড়া চিঠিতে নতুন ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) স্থাপনে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানসহ সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার/স্টক-ব্রোকার/অনুমানকৃত) নিয়মমালা, ২০০০ অনুযায়ী নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করতে বলা হলো।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, নতুন ৫২টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকারের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ডিএসই’র কাছে আবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি। বর্তমানে নতুন ট্রেকগুলোতে আইটি সিস্টেম ডেভেলপ করা বড় সংকট। কারণ ডিএসই থেকে ট্রেক লাইসেন্স গ্রহণের সময় ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে, নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে হবে। একইসঙ্গে ব্যাক অফিস সিস্টেমও চালু করতে হবে। এসব সিস্টেম চালুর করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। তবে ট্রেক লাইসেন্স পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু করার বিধান রয়েছে।

তথ্য মতে, শেয়ারবাজারের পরিধি বাড়াতে নতুন ট্রেক বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেয় অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন ট্রেক ইস্যুর বিষয়ে ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কমিশন। 

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৯৯০তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় সংশ্লিষ্ট বিধিমালা পরিপালন ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন ট্রেক অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এরপর ডিএসইর ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে নতুন ট্রেকের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

প্রথম দফায় নতুন ট্রেকের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার মেয়াদ ১৮ মার্চ পর্যন্ত রাখা হয়। তবে ওই সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবেদন গ্রহণের মেয়াদ ২৮ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ে মোট ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের ট্রেক সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য আবেদন করে। যাচাই-বাচাই শেষে প্রথম ধাপে বিভিন্ন কারণে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন বাতিল হয়। ফলে ট্রেক সার্টিফিকেট প্রদানের যোগ্য এমন ৫১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিএসইসিতে পাঠায় ডিএসই। পরবর্তীতে বিএসইসির নির্দেশে আরো ৪টি প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় যুক্ত করে ডিএসই। সব মিলিয়ে ডিএসই’র প্রস্তাবিত ট্রেকের আবেদনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫টি। পরবর্তীতে গত ১৮ মে প্রথম দফায় ৩০টি, ২১ জুন দ্বিতীয় দফায় ২৬টি এবং ২৬ আগস্ট তৃতীয় দফায় ৯টি ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিএসই’র নিকুঞ্জ টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন ট্রেকহোল্ডারদের লাইসেন্স বিতরণ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এবং পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার (পিআইও) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন ট্রেক লাইসেন্স পেয়েছে, তাদের আমরা আলোচনা করেছি। ট্রেক লাইসেন্স পাওয়ার পর করণীয় নির্ধারণ প্রসঙ্গে তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে। এখন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তারা কমিশন থেকে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকারের লাইসেন্স নিতে হবে। একই সঙ্গে নতুন ট্রেক লাইসেন্সধারীদের নিজস্ব আইট সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান স্টক-ডিলার ও স্টক-ব্রোকারের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ডিএসই’র কাছে আবেদন জমা দিয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে আমরা বেশ কিছু আবেদন বিএসইসিতে পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নতুন ট্রেক লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো যাতে দ্রুত বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসতে পারে সে জন্য ডিএসই’র পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

ডিএসই’র নতুন ৫২ ব্রোকারেজ হাউজ হলো- কবির সিকিউরিটিজ, মোনার্ক হোল্ডিংস, সোহেল সিকিউরিটিজ, আরএকে ক্যাপিটাল, যমুনা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, স্নিগ্ধা ইক্যুইটিস, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ কোম্পানি, সাউথ এশিয়া সিকিউরিটিজ, ট্রাইস্টার সিকিউরিটিজ, ৩আই সিকিউরিটিজ, সোনালী সিকিউরিটিজ, কেডিএস শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, আল হারমাইন সিকিউরিটিজ, মির সিকিউরিটিজ, টিকে শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, এনআরবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এসবিএসি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, আমায়া সিকিউরিটিজ, প্রুডেন্সিয়াল ক্যাপিটাল, তাকাফুল ইসলামী সিকিউরিটিজ, বিএনবি সিকিউরিটিজ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স সিকিউরিটিজ, মাহিদ সিকিউরিটিজ, বারাকা সিকিউরিটিজ, এএনসি সিকিউরিটিজ, এসএফআইএল সিকিউরিটিজ, তাসিয়া সিকিউরিটিজ, ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ, সেলেস্টিয়াল সিকিউরিটিজ, ট্রেড এক্স সিকিউরিটিজ, বি রিচ, ইম্পেরোর সিকিউরিটিজ, বি অ্যান্ড বিএসএস ট্রেডিং, এনওয়াই ট্রেডিং, কলম্বিয়া শেয়ার, এমকেএম সিকিউরিটিজ, স্মার্ট শেয়ার, বিনিময় সিকিউরিটিজ, রিলিফ এক্সচেঞ্জ, আমার সিকিউরিটিজ, ব্যাঙ জি জিও টেক্সটাইল, মিনহার সিকিউরিটিজ, বিপ্লব হোল্ডিংস, অ্যাসোসিয়েটেড ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, রহিমা ইক্যুইটি, অ্যাসুরেন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, সিএএল সিকিউরিটিজ, এসবিআই সিকিউরিটিজ, উইংস ফিন, ফারইস্ট শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, ট্রাস্ট রিজিওনাল ইকুইটি এবং ইন্নোভা সিকিউরিটিজ।

এনটি/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়