ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

৭,৭৩১ কোটি কোটি টাকার ১২ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১২, ১ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ২২:৩৯, ১ ডিসেম্বর ২০২১
৭,৭৩১ কোটি কোটি টাকার ১২ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন

ফাইল ছবি

৭ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির সভায় ১৩টি ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও চট্টগ্রামে গম সংরক্ষণের জন্য সাইলো নির্মাণের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি কমিটি।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৩তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৯তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য একটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি, স্থানীয় সরকার বিভাগের দুটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৭,৭৩১ কোটি ৪৮ লাখ ১ হাজার ৭৪৮ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।’

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মর্ডান ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্ট (এমএফএসপি)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ড-২৪ এর আওতায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রামে একটি গম সংরক্ষণের জন্য স্টিল সাইলো স্থাপনের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘মর্ডান ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্ট (এমএফএসপি)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-২৫ এর আওতায় ৭৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার খুলনায় একটি গম সংরক্ষণের জন্য স্টিল সাইলো স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে তিনটি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, বাংলাদেশ এবং (২) আলটুনটাস, তুরস্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৫৫ কোটি ৯১ লাখ ৭ হাজার ৩৮৯ টাকা।’

সভায় ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে বিআরটিসি, বুয়েট এবং এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ১৬ লক্ষ ১০ হাজার ৪৭০ টাকা।’

সভায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজ সম্পাদনের জন্য এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে কারিগরিভাবে টিইসি’র সুপারিশ করা একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেডকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৭৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩০১ টাকা।’

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ঢাকায় মিরপুরের পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পের লট নং ডব্লিউ-৬-এল-১ (বিল্ডিং ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০) -এর নির্মাণ কাজ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৯৪ টাকা। নির্মাতা সংস্থা ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন প্রকল্পটি বস্তবায়ন করবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার উত্তরা ১৮নং সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনসাধারণের জন্য এপার্টমেন্ট নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পিবিএল, জিকে বিল্ডার্স এবং পায়েল-এর কাছ থেকে ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৬৪ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব সিসিজিপি সভায় অনুমোদিত হয়। পূর্ত কাজ চলমান অবস্থায় কিছু টেন্ডার/ননটেন্ডার আইটেম কম-বেশি হওয়ায় মূল চুক্তিমূল্য থেকে ভেরিয়েশন বাবদ ২ কোটি ৭৯ লক্ষ ২১ হাজার টাকা ব্যয় কমিয়ে ১৬৪ কোটি ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ১৬২ টাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

সভায় ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় পূর্ত কাজ বাস্তবায়নে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে আতাউর রহমান খান লিমিটেড এবং মাহবুব ব্রাদার্স লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ৪৫লাখ ৭৭ হাজার ৮৯৮ টাকা।

তিনি বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পের প্যাকেজ-১, লট-১ এর আওতায় একটি ২৮ কাটার সাকশন ড্রেজারসহ সহায়ক জলযান ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ ও ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্স লিমিটেড, চট্টগ্রাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এজন্য ব্যয় হবে ১৮৯ কোটি ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ টাকা।’

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ-এর জন্য ১টি ২৮ কাটার সাকশন ড্রেজারসহ সহায়ক জলযান ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি (প্যাকেজ-১, লট-০২) সংগ্রহ ও ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলি শীপ বিল্ডার্স লিমিটেড, চট্টগ্রাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য ব্যয় হবে ১৮৯ কোটি ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ টাকা।’

টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড- এর জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) রক ফসফেট (৭২% বিপিএল মিনিমাম) লট ভিত্তিতে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জর্ডান ফসফেট মাইনস কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড রক ফসফেট সরবরাহ করবে। এতে প্রতি মেট্রিক টন রক ফসফেটের দাম ২৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট মার্কিন ডলার ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৮ কোটি ৮৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যয় হবে।

সভায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) লট ভিত্তিতে গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌদি আরব এর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে প্রতি মেট্রিক টন ৯৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ২ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪৪ কোটি ৬৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে।

সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়ার কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানি একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সার ৮০০ মার্কিন ডলার হিসেবে ২ লক্ষ ১০ হাজার (+১০%) মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১,৪৪১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন ‘প্রডিনটর্গ’ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সার ৮০০ মার্কিন ডলার হিসেবে এতে ব্যয় হবে ২১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৮৫৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

হাসনাত/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়