ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৮ কারণে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে বিক্রির চাপ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ১৯ জুলাই ২০২২  
৮ কারণে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে বিক্রির চাপ

দেশীয় ও বৈদেশিক অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আস্থা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে থাকায় তারা পুঁজিবাজার নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারে পড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান পুঁজিবাজারে প্রধানত ৮টি কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়া, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, টাকার মান কমে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসা, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট লাঘবে সরকারের নতুন নির্দেশনা এবং কারসাজিকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ অন্যতম।

পুঁজিবাজারে ঈদ পরবর্তী ধারাবাহিক পতন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (১৮ জুলাই) ও মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) পুঁজিবাজারে বড় পতন ঘটেছে। ঈদের পর থেকে অর্থাৎ ১২ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত এই ৬ কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক ২০২.৩১ পয়েন্ট ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসইএক্স সূচক ৩৭৪.০৬ পয়েন্ট কমেছে।

তাই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আইসিবিসহ অন্যান্য বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাপোর্ট দিলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যার কমবেশি প্রভাব পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর ওপর পড়ছে। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দেশে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। ডলার সংকটের সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এক বছরে সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করার পর রিজার্ভ নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। আর নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমলেও এই মুহূর্তে লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে রয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা ও পণ্য বাজারের অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অন্যদিকে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী এ মুহূর্তে বিনিয়োগ না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এতে বাজারের তারল্যও কমে গেছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে গত ৬ থেকে ৭ বছরের ভেতরে এতো খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি। এখন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্রেতা নেই। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বিশ্বয়িক অর্থনীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজারে আরও পতন হতে পারে। তাই তারা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। সামনের দিনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে পারে- এমন আতঙ্ক সবার মনে বিরাজ করছে। এ মুহূর্তে যদি ইন্সটিটিউশনাল সাপোর্ট দেওয়া যেতো তাহলে পুঁজিবাজারের এতো খারাপ অবস্থা হতো না। আইসিবিসহ অন্যান্য বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাপোর্ট দিলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এ ছাড়া সরকারি ব্যাংকগুলো চাইলেই পুঁজিবাজারে সাপোর্ট দিতে পারে। এখন পুঁজিবাজার যে লেভেলে আছে, এ পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনলে তাদের ক্ষতি হবে না। কিন্তু এ পড়তি মার্কেটে তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে, ৬ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছিতে সূচকের পতন থেমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্তে অর্থনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিতে পারে। তবে সরকারের এসব পলিসি খারাপ না। তারপরেও যদি আমাদের এক্সপোর্ট গ্রো করে তাহলে আমরা উতরে যাব। তবে ডলারের দাম বাড়ছে, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ কমছে; বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়ছে, দেশের ফরেন লোন বাড়ছে। এসব বিষয়গুলোর কারণে মানুষ বিনিয়োগে যেতে শঙ্কিত বোধ করছে।’

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ঈদের পরে মার্কেট ভালো থাকবে- এমনটাই সবার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ঈদের পর থেকে মার্কেট স্লো ডাউনে চলছিল। তবে সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রিপোর্ট হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণে সোমবার ও মঙ্গলবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে শেয়ার বিক্রির চাপ বেশি রয়েছে। এ ছাড়া যেসব সাধারণ বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করেছেন, তাদের থেকেও শেয়ার বিক্রির চাপ আসছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোটামুটি ‘বাই মুডে’ রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই মার্কেট ঘুরে দাঁড়াবে। বিএসইসির পক্ষ থেকে সার্বিক চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়