ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩১

সরকারি অর্থ ব্যয়ে কড়াকড়ি আরোপ

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১৪ মার্চ ২০২৩  
সরকারি অর্থ ব্যয়ে কড়াকড়ি আরোপ

নতুন গাড়ি কেনার পাশাপাশি ‘সি’ ক্যাটাগরির সব ধরনের প্রকল্পে অর্থ ছাড় স্থগিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও  কড়াকড়ি আরোপ করা হলো।এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে সোমবার একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি সব ধরনের কাজে নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে সব ধরনের যানবাহন (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) ক্রয় বন্ধ থাকবে। বিদ্যমান নীতিমালার পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছসাধনে বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত পরিপত্রের আলোকে ‘চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে (পরিচালন ও উন্নয়ন) বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে’ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে পরিচালন বাজেটের অধীন প্রদর্শিত বরাদ্দ শতভাগ ব্যয় করতে পারবে। তবে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ; পেট্রল-অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ এবং প্রশিক্ষণ খাতে (প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ছাড়া) বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

আরো পড়ুন:

পরিপত্রে উন্নয়ন বাজেটের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে বলা হয়, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের অধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত নির্ধারিত ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রকল্পে সরকারি অংশে বরাদ্দকৃত অথের শতভাগ এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির চিহ্নিত প্রকল্পে সরকারি অংশে বরাদ্দকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ সংরক্ষিত রেখে অনূর্ধ্ব ৮৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত প্রকল্পের অর্থ ছাড় পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে ক্যাটাগরি (এ, বি ও সি) নির্বিশেষে যেসব প্রকল্প চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২০২৩ সালের ৩০ জুনে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এবং কোনোক্রমেই মেয়াদ বৃদ্ধির অবকাশ নেই, সেসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ শতভাগ ব্যয় করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে না।

অন্যান্যের মধ্যে আপ্যায়ন ব্যয়, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণ ব্যয়, অন্যান্য মনিহারী, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া পরিচালন বাজেটের মতো উন্নয়ন বাজেটেও বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ; পেট্রল-অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া নতুন বা প্রতিস্থাপক হিসেবে সব ধরনের যানবাহন (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) ক্রয় বন্ধ থাকবে।

পরিপত্রে বলা হয়, এসব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে এবং অন্য কোনো খাত থেকে এসব খাতে পুনঃউপযোজন করা যাবে না।

এর আগে গত বছরের ৩ জুলাই, ২১ জুলাই এবং ১৩ ডিসেম্বর সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছসাধনের লক্ষ্যে পরিপত্র জারি করা হয়। ওসব পরিপত্রে সরকারি বিভিন্ন ব্যয়ের খাতে লাগাম টানা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সংশোধিত বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ করা হবে ন: চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ না করতে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কাছে গত সোমবার চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দের বিস্তারিত বিভাজন পাঠানো হলো। প্রত্যেক খাতের বিপরীতে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ না করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। তবে এ কর্তৃত্ব জারির পর যেসব খাতে অর্থ বিভাগ কর্তৃক অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করা হবে, সেসব অতিরিক্ত বরাদ্দ এ সংশোধিত কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

সূত্র জানায়, যেসব খাতে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মূল মঞ্জুরির অতিরিক্ত অর্থ সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেসব খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সম্পূরক/অতিরিক্ত আর্থিক বিবৃতির মাধ্যমে যথা সময়ে নিয়মিত করা হবে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সংশোধিত কর্তৃত্ব অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান/অধিদফতর/ পরিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন অনুমোদিত প্রকল্পের সরকারি অংশের বরাদ্দের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ এবং প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের কোনো সম্মতির প্রয়োজন হবে না। ওই অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছাড় হয়েছে বলে গণ্য হবে। প্রকল্প পরিচালকরা এ অর্থ সরাসরি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সংশোধিত অনুমোদিত/ অননুমোদিত প্রকল্পসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ কর্তৃক ইতঃপূর্বে জারিকৃত ‘উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮’-তে বর্ণিত পদ্ধতি অপরিবর্তিত থাকবে।

এ সংক্রান্ত পৃথক এক পরিপত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বলা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে মূল মঞ্জুরির পরিমাণ সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় বেশি এবং ইতোমধ্যে সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় অধিক অর্থ ছাড় কিংবা ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় অতিরিক্ত ছাড়কৃত কিংবা ব্যবহৃত অর্থ অবিলম্বে সমর্পণ বা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে এরূপ সমর্পণ/জমাকৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট পত্রের দুটি প্রতিলিপি চলতি বছরের জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ছাড়া কোনো অধিদফতর, পরিদফতর কিংবা অধস্তন অফিস কর্তৃক অর্থ প্রত্যর্পণ সম্পর্কিত পাঠানো চিঠি অর্থ বিভাগ কর্তৃক বিবেচিত হবে না।

/হাসনাত/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়