ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বাড়ছে করের আওতা, দেশীয় শিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ৩০ মে ২০২৩  
বাড়ছে করের আওতা, দেশীয় শিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ

রাজস্ব আয় বাড়াতে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া, এবারও দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় আমদানি পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও অন্যান্য সংগঠনের পরামর্শ অনুযায়ী করহার বাড়ানোর চেয়ে করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। 

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে কলম, সিগারেট, জর্দা-গুল, খেজুর, সিমেন্ট, কাজু বাদাম, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার, টয়লেট টিস্যু, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, বিদেশি টাইলস, মোবাইল ফোন, বাসমতি চাল, চশমার ওপর শুল্ক-কর অথবা ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে, এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। নতুন অর্থবছরে বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রীর জন্যও অতিরিক্ত ২ শতাংশ ভ্যাট গুনতে হবে। কারণ, এসব পণ্য উৎপাদনে ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এসব পণ্য উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়েল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। এটি বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে তাজা ও শুকনো খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। 

দেশে বাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে আমদানি করা কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের ফল ও বাদামের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়ায় সামনে বাদামসহ বিভিন্ন ফলের দাম বাড়তে পারে।

শুল্ক ফাঁকি রোধে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে মোট করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বিদেশি ওভেনের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য, দেশে ওভেন উৎপাদনের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া আছে। ফলে, বিদেশি ওভেনের দাম বাড়লেও দেশি ওভেনের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। 

বর্তমানে রান্নায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিংওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে, সামনে সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যম স্তরের (স্টার, নেভি) সিগারেটের দাম ১৩৪ টাকা, উচ্চ স্তরের (গোল্ডলিফ) সিগারেটের দাম ২২৬ টাকা এবং অতিউচ্চ স্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে, বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।

মোবাইল ফোনকে বিলাসী পণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ভ্যাট আরোপ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে। সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি আছে। সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে। চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিরিষ কাগজ আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।

নতুন বাজেট বাড়ি নির্মাণের খরচ বাড়বে। বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বিদেশি টাইলস আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশি টাইলের দাম বাড়তে পারে। মূলত, দেশীয় টাইলস শিল্পকে সুবিধা দিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। 

বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে  টিআইএন সনদধারীর সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এর মধ্যে মাত্র ৩২ লাখ ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দেন। এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখের করযোগ্য আয় নেই। রিটার্ন দাখিল বাড়ানোর পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে। করযোগ্য আয় না থাকলেও বিভিন্ন সেবা নিতে কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যারা নেবেন, তাদের ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। প্রমাণপত্র পেতে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর আরোপ হতে পারে। বর্তমানে ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ গ্রহণ ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৩৮ ধরনের সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগে। আগামী অর্থবছরে এর সঙ্গে আরও ছয় ধরনের সেবা যুক্ত হতে পারে।

২০২৬ সালের মধ্যে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করতে চায় রাজস্ব বোর্ড। এজন্য বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এনবিআরের শাখা কার্যালয় স্থাপন ও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নতুন করদাতা শনাক্ত করা হবে। এ ছাড়া আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী স্কিম গ্রহণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের করদাতাদের সহজে কর প্রদানসহ রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধ করা হবে। কর আদায়ে সহযোগিতা করার জন্য বেসরকারি এজেন্ট নিয়োগেরও পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। তবে, এই এজেন্টদের কর আদায়ের ক্ষমতা থাকছে না। 

হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়