ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে প্লাস্টিক কালেকশন অ্যান্ড রিসাইক্লিং ক্যাম্পেইন 

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৪ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৩:১৩, ৪ জুন ২০২৩
ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে প্লাস্টিক কালেকশন অ্যান্ড রিসাইক্লিং ক্যাম্পেইন 

 ‘প্লাস্টিক কালেকশন অ্যান্ড রিসাইক্লিং’ ক্যাম্পেইন 

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধান করি’ (Solutions to Plastic Pollution) । বৃক্ষরোপণ, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

সপ্তাহব্যাপী নানা আয়োজনে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির এনভায়রনমেন্ট, হেল্থ অ্যান্ড সেফটি (ইএইচএস) বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৩ জুন, ২০২৩) গাজীপুরের চন্দ্রাস্থ ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে ‘প্লাস্টিক কালেকশন অ্যান্ড রিসাইক্লিং’ ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, প্রশাসন বিভাগের প্রধান মো. ইয়াছির আল-ইমরান, উপবিভাগীয় প্রধান তানভীর আহাম্মেদ, ইএইচএস বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. সাদেকুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

হেডকোয়ার্টার ব্লক-বি এরিয়ার প্রধান ফটক হতে ব্লক-এ প্রধান ফটক পর্যন্ত হাইওয়ের পাশ থকে জনসাধারণের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক এবং পলিথিন সংগ্রহ করা হয়। প্লাস্টিক সংগ্রহ শেষে প্লাস্টিক দূষণ হতে পরিবেশ রক্ষায় করণীয় ও ওয়ালটনের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা সভা হয়।

ওয়ালটনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণ পৃথিবীর ইকোসিস্টেমের জন্য এক ভয়ঙ্কর বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য জীবের অস্তিত্বকে বিপণ্ন করে তুলেছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যা যা ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাষ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিকের আবিষ্কারের ফলে জীবনের সব স্তরে প্রয়োজনীয় প্রায় সব দ্রব্য ও দ্রব্যাদির অংশবিশেষ প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি হচ্ছে। প্রাকৃতিক ধাতব, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে তৈরি যেকোনো দ্রব্যের চেয়ে প্লাস্টিক সস্তা, ব্যবহারবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। ফলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং অবচেতন মনেই আমরা জল, স্থল ও অন্তরীক্ষের সবকিছুকে প্লাস্টিক দূষণে দূষিত করে ফেলেছি। প্লাস্টিক দূষণ আজ মানুষসহ অন্য সব জীবের অস্তিত্ব বিপণ্ন করে তুলছে। ব্যবহার কমিয়ে যথাযথভাবে এগুলো রিসাইকেল নিশ্চিত করতে হবে।

ওয়ালটনের প্রশাসন বিভাগীয় প্রধান মো. ইয়াছির আল-ইমরান বলেন, নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহার প্লাস্টিক দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বেশিরভাগই পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশে থেকে বর্জ্যের আকার নেয়। মানুষের অসচেতনতাই প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ। প্লাস্টিক এমন এক রাসায়নিক পদার্থ যা পরিবেশে পচতে অথবা কারখানায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে প্রচুর সময় লাগে। তাই একে ‘অপচ্য পদার্থ’  হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তাই প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণের জন্য প্লাস্টিক দূষণ পরোক্ষভাবে দায়ী। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

ইএইচএস বিভাগের প্রধান মো. সাদেকুর রহমান জানান, বাংলাদেশে প্রতিদিন আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, তার মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগ পুনর্চক্রায়ন, ৩৯ ভাগ ভূমি ভরাট এবং বাকি ২৫ ভাগ সরাসরি পরিবেশে দূষক হিসেবে যোগ হচ্ছে। প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি মূলত জীবাস্ম জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম অয়েল) থেকে পলিমার হিসেবে তৈরি করা হয়। তবে প্রস্তুতকালে নানা রকম সংযোজনকারী জৈব যৌগ যোগ করা হয়। পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্য নানা রকম মারাত্মক বিপজ্জনক জৈব যৌগ নিঃসরণ করে। তার মধ্যে বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার- এবং পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল পদার্থ এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস উল্লেখযোগ্য।

এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষসহ অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম নষ্ট করে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত এসব রাসায়নিক পদার্থ স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ন্যানো প্লাস্টিক বর্জ্য এবং প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ জীবের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন করতে পারে এবং ক্যানসারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে।

হাইওয়ের পাশ থকে জনসাধারণের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক এবং পলিথিন বর্জ্য সংগ্রহ

ইএইচএস বিভাগের উপবিভাগীয় প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাজু বলেন, পরিবেশে পচনরোধী প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য, উপজাত, কণিকা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য নিঃসরিত অণুর সংযোজন; যা মাটি, পানি, বায়ুম-ল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, তাকে সাধারণভাবে প্লাস্টিকদূষণ বলা হয়। গত ৫০ বছরে পৃথিবীতে মাথাপিছু এক টনের বেশি প্লাস্টিকের দ্রব্য উৎপাদন করা হয়েছে। এসব পচনরোধী প্লাস্টিক বর্জ্যের শতকরা ১০ ভাগ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হলেও বাকি ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ব পরিবেশকে নানাভাবে বিপণ্ন করে তুলেছে। এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নানা রকম মাইক্রো বা ন্যানো কণা বা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে প্রতিবেশে ও মানবস্বাস্থ্যে ভয়ঙ্কর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীতে প্রতি বছর ১৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে। এ বর্জ্যের ৫১ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে এশিয়া মহাদেশে।

এরপর প্লাস্টিক রিসাইকেল ম্যানেজমেন্ট সেকশনের নিকট সংগৃহিত প্লাস্টক সমূহ হস্থান্তর করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

অনুষ্ঠানে ফায়ার সেইফটি ম্যানেজমেন্ট সেকশন ইনিচার্জ মো. ইশাদুল ইসলাম, ইফ্লোয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ডেপুটি ইনচার্জ মো. তাজমির হাসান, এবং ইএইচএস সেকশন ডেপুটি ইনচার্জ মো. রায়হানসহ ইএইচএস বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইভেন্টের সমন্বয়কারী মো. তৌহিদ সরকার ও সঞ্চালনায় ছিলেন ইএইচএস বিভাগের উপবিভাগীয় প্রধান মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাজু।

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়