ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

দ্বৈত কর পরিহারে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে নতুন চুক্তি

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ১২ মার্চ ২০২৪  
দ্বৈত কর পরিহারে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে নতুন চুক্তি

দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর ফলে উভয় দেশ লাভবান হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং নেদারল্যান্ডসের ট্যাক্স অ্যাফিয়ার্স অ্যান্ড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মন্ত্রী এম এল এ ভ্যান রিজ নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। 

এ সময় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, নেদারল্যান্ডসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সোনজা কুইপসহ উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত চুক্তি প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই সই হয়। ইতোমধ্যে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি যেমন ওইসিডি মডেল কিংবা ইউএন মডেলেও নানা পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েশন পিরিয়ড অতিক্রম করছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সই করা দ্বৈত কর পরিহার সংক্রান্ত চুক্তিগুলোর অসামঞ্জস্যতা দূর করতে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে চুক্তিগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি সংশোধন করে নতুন চুক্তি সম্পাদন করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। 

বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে স্বাক্ষরি নতুন চুক্তিতে ৩৩টি আর্টিকেল রয়েছে। এর মধ্যে করের আওতা বিস্তৃত করতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর্টিকেলে যেমন পরিবর্তন আনা হয়েছে, একই সঙ্গে নতুন নতুন ক্ষেত্র থেকে কর আহরণের জন্য কিছু নতুন আর্টিকেল সংযোজন করা হয়েছে।

নতুন চুক্তিতে শুধু রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে করমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আর্টিকেল অন্তর্ভুক্ত করার ফলে সার্ভিস তথা সেবার বিপরীতে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হারে কর আহরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

শেয়ার হস্তান্তর বাবদ অর্জিত মূলধনী মুনাফা বাংলাদেশে করযোগ্য হওয়ার শর্ত নতুন চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সোর্স দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে অর্জিত মূলধনী লাভ থেকে কর আহরণ করা সম্ভব হবে।

বিদ্যমান চুক্তির কোনো আর্টিকেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন কোনো আয় করদাতা যে দেশের নিবাসী সে দেশে কর আরোপ করার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে নতুন চুক্তিতে এটি সংশোধন করা হয়েছে। এখন যে দেশে এমন আয় উদ্ভুত হবে, সে দেশে কর আরোপ করার বিধান রাখা হয়েছে।

এছাড়া, কর দাবি আদায়ে সহযোগিতার নিমিত্ত এই আর্টিকেলটি নতুন সংযোজন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদনকারী উভয় রাষ্ট্র রাজস্ব আদায়ে একে অপরকে সহযোগিতা করবে।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক অত্যন্ত উন্নত। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের ১৫টি সহযোগী দেশের মধ্যে অন্যতম। নেদারল্যান্ডস ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের নবম রপ্তানিকারক বৃহত্তর অংশীদার দেশ, যার রপ্তানিমূল্য ২ হাজার মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি।

তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে আছে নিটওয়্যার, ওভেন, গার্মেন্টস, গলদা চিংড়ি, জুতা, বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেল ইত্যাদি। অপরদিকে, বাংলাদেশ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস থেকে ৩০০ মিলিয়নের বেশি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এসবের মধ্যে আছে—ক্যাপিটাল মেশিনারি, শাক-সবজি, তৈরী খাদ্য উপাদান, জীবিত প্রাণি (পশু ও পাখি), খনিজ দ্রব্যাদি, কেমিক্যালস, ওষুধ, অর্গানিক কেমিক্যালস, প্লাস্টিক, রাবার ইত্যাদি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের স্থান চতুর্থ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশে ২ হাজার ৫৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। জ্বালানি, বাণিজ্য, চামড়া খাত, চামড়াজাত পণ্য, সিমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছে।

হাসনাত/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়