পুঁজিবাজার চাঙা করতে বাজেটে থাকছে একগুচ্ছ প্রণোদনা
দেশের বিদ্যমান পুঁজিবাজার উন্নয়নে আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে নানা ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর ছাড় বাড়ানো এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওপর কর ছাড় দেওয়া। বিশেষ করে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোতে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা জন্য কর রেয়াতসহ আরো কিছু প্রণোদনা দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে করের হার বাড়ানো হতে পারে পুঁজিবাজারে বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ওপর এবং করের ব্যবধানও বাড়ানো হতে পারে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর। অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের বাইরে থাকা অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে তিনটি পরিকল্পনার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করা। ব্যাংকিং খাত থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সীমিতকরণে পদক্ষেপ নেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে প্রতিষ্ঠাকরণে এই বাজারকে দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করানোর কৌশল নির্ধারণ করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে থাকা কোম্পানিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন করহার বিদ্যমান রয়েছে। যেমন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও (প্রাথমিক গণ-প্রস্তাব) এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে তার ওপর করহার রয়েছে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কম শেয়ার আইপিও এর মাধ্যমে হস্তান্তরিত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে করহার রয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ।
একইভাবে আয়কর আইন, ২০২৩ এ সংগায়িত কোম্পানিসমূহের মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয় তাদের ওপর করভার রয়েছে ২৫ শতাংশ একক ব্যক্তি কোম্পানিতে করহার রয়েছে ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে, পাবলিকলি ট্রেডেড (পুঁজিবাজারে আছে)-ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতিত) কর হার রয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ শতংশ। পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর রয়েছে ৪০ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে শেয়ার বাজারে আছে তাদের সাথে যেসব কোম্পানি শেয়ার বাজারে নেই, তাদের কর ব্যবধান বৃদ্ধি করা হতে পারে। যেমন-শেয়ার বাজারে থাকা ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বিদ্যমান কর রয়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। আর শেয়ার বাজারে বাইরে যারা রয়েছে তাদের ওপর করহার রয়েছে ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে দুটির মধ্যে করের ব্যবধান হচ্ছে মাত্র আড়াই শতাংশ।
আগামী বাজেটে এই ব্যবধান ৫ শতাংশে উন্নীত করা প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, সেক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য করহার হতে পারে ৩৫ শতাংশ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাদে শেয়ার বাজারে থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর ওপর কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হতে পারে।
জানা গেছে, শেয়ার বাজারের বাইরে থাকা মোবাইল ফোন কোম্পানির ওপর কর হার বাড়ানো হতে পারে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান কর হার ৪৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে গ্রামীণ ও রবি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংললিংক পুঁজিবাজারে বাইরে রয়েছে। এর সাথে সরকারি ফোন কোম্পানি টেলিটকও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নয়।
এদিকে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করতে বিশেষ কর প্রণোদনার দাবি জানিয়েছে। এ দাবির মধ্যে রয়েছে ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ করার কথা বলেছে।
এছাড়া যেসকল প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকার বেশি ট্যাক্স ইনসেনটিভ ও ট্যাক্স বেনিফিট বা ট্যাক্স ইনটেনসিফ উপভোগ করে, তাদের বাধ্যতামূলক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সর্বশেষ প্রস্তাব অনুযায়ী ট্যাক্স হলিডে প্রদানের সুপারিশ করেছে।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ