ব্যাংক খাতে আগামী জানুয়ারিতে শুরু হবে রিস্ক বেইজড সুপাভিশন: গভর্নর
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে চালু করা হবে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন (আরবিএস)। আগামী ৬ মাস ব্যাংকগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংক নিয়ে রিস্ক বেইজড সুপারভিশনের পাইলট প্রকল্প শেষ হয়েছে।
সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক খাতে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন পদ্ধতি চালুর অগ্রগতি নিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন।
এ সময় ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, নুরুন নাহারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর বলেন, “আমরা ৬১টি ব্যাংকের কাজকে সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে ১২টি গ্রুপে ভাগ করে দেব। একেক গ্রুপ একেক ব্যাংকের কার্যক্রম তদারকি করবে। যে গ্রুপ যেই ব্যাংক তদারকি করবে, সেটি নিয়ে তারা সুপারভিশন কার্যক্রমের তথ্য আদান প্রদান পর্যালোচনা করবে। সুপারভিশন প্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি, কার্যকর পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে কাজ করবে এই ১২টি গ্রুপ।”
তিনি বলেন, “পৃথিবীর ১২০টি দেমের রিস্ক বেইজড সুপারভিশনের কার্যক্রম চালু আছে। একেক ব্যাংকের একেক প্রডাক্টের জন্য একেক ধরনের রিস্ক হতে পারে। যেমন- যারা ফরেন ট্রেডে জড়িত, তাদের রিস্ক বেশি হতে পারে। আবার যাদের বেশিরভাগ কার্যক্রম এসএমই প্রডাক্ট নিয়ে, তাদের রিস্ক কম হতে পারে। এসব বিষয় অ্যানালাইসিস করতে হবে। সব ব্যাংক ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডাটা প্রদান করবে। এসব ডাটা অ্যানালাইসিস করে কার্যক্রম চালানো হবে। এটি ৩৬০ ডিগ্রি সুপারভিশন হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা রিস্ক বেইজড সুপারভিশন (আরবিএস) চালু করার পর ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড ৯ (আইএফআরএস ৯)-কে বাস্তবায়ন করব। আশেপাশের দেশগুলো এই স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়ে গেছে। আমরা ২০২৮ সালে আইএফআরএস-৯ চালু করতে পারব বলে আশা করি। আসলে এটি ৪ বছরে নিচে চালু করা যায় না। আমরা দুই বছরে তা চালু করার চেষ্টা করব।”
সংবাদ সম্মেনে এক প্রশ্নোত্তরে ছয় ব্যাংক একিভূত হওয়া বিষয়ে গভর্নর বলেন, “এসব ব্যাংকের সম্পদের মান নিরূপনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। একীভূত করার কাজও এগিয়ে চলছে। যদি কোনো ব্যাংক একীভূত হতে না চায়, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে। তাদের বক্তব্য যদি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে তা প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি তারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে পারে, তাহলে তাদের বক্তব্য প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। এছাড়া আমরাও এসব ব্যাংকের বিষয়ে পর্যালোচনা করেছি। এর সঙ্গে তাদের পরিকল্পনা কতটুকু মিল পাওয়া যায়, সেটি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতীতে ব্যাংকিং খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয়েছে রিস্ক বেইজড সুপারভিশন সেই হস্তক্ষেপ কি মোকাবেলা করতে পারবে- এমন প্রশ্নোত্তরে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আর্থিক খাতে অতীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে হয়েছে। এতে আর্থিক খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। আগামীতে এ ধরনের লুটপাট বন্ধ করতে হলে রাজনীতিকদের শুদ্ধ হতে হবে। তাছাড়া তার পরিণতি তো আপনারা দেখছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, দেশের ব্যাংকিং খাত জবাবদিহিমূলক ও ঝুঁকি সচেতন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা, সুপারিভশনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক উদ্ভাবনকে উৎসাহত করবে বলে প্রত্যাশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা সুসংহত করবে এবং দীর্ঘময়াদী টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করবে।
ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী