ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে পাঠানোর বিষয়ে জানাতে হবে আয়কর রিটার্নে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ১৮ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৬:৪১, ১৮ আগস্ট ২০২৫
প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে পাঠানোর বিষয়ে জানাতে হবে আয়কর রিটার্নে

প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে দেশে পাঠানো হয়েছে কিনা, এই আয় বিদেশে অবস্থান করে পাঠানো হয়েছে কিনা এসব বিষয় জানাতে হবে আয়কর রিটার্নে।

এছাড়া প্রকৃত রেমিট্যান্স উপার্জনকারী ছাড়া অন্য কারো ব্যাংক হিসাবে রেমিট্যান্স পাঠানো হলে তা দান, ঋণ বা অন্য কী কারণে প্রেরণ করা হয়েছে তার যথাযথ ব্যাখ্যা, প্রমাণ এবং লেনদেনের বিবরণী আয়কর নথিতে দেখাতে হবে। আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা-২০২৫ এ, এসব নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ফাঁকি রোধ ও কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে ‘আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা, ২০২৫’ জারি করেছে। নতুন এ নির্দেশনায় করদাতাদের রিটার্ন যাচাই, অডিট প্রক্রিয়া, ঝুঁকিপূর্ণ খাত চিহ্নিতকরণ এবং আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কর ফাঁকি প্রতিরোধ, কর পরিহারের প্রবণতা কমানো এবং একটি সুস্থ কর সংস্কৃতি গড়ে তোলাই মূল উদ্দেশ্য। ঝুঁকিপূর্ণ খাত চিহ্নিত করা এবং কর আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করাও অডিটের অন্যতম লক্ষ্য।

যাদের রিটার্ন অডিট হবে: রিটার্ন অডিটের জন্য রিস্ক বেইজড সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন রেন্ডম সিলেকশন পদ্ধতিতে বাছাই করা হবে। কোম্পানি ও অন্যান্য বড় করদাতাদের ক্ষেত্রে বিশেষ অডিট টিম গঠন করে ঝুঁকি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে।

রিটার্ন যাচাইয়ে যা দেখা হবে: অডিটে করদাতাদের বিভিন্ন উৎস থেকে আয় চাকরি, ভাড়া, কৃষি, ব্যবসা, মূলধন লাভ, প্রবাসী আয় ইত্যাদি সঠিকভাবে ঘোষিত হয়েছে কি না তা যাচাই করা হবে। চাকরি থেকে প্রাপ্ত আয় ও ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের মিল খতিয়ে দেখা হবে। ভাড়া আয় ঘোষিত মূল্যের সঙ্গে বাজারদরের সামঞ্জস্য যাচাই হবে।ব্যবসায়িক লেনদেনে ব্যাংক হিসাব, ক্রয়-বিক্রির নথি ও ভ্যাট রিটার্ন মিলিয়ে দেখা হবে।

স্বচ্ছতা: অডিট টিমের তদন্ত শেষে করদাতাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। যদি অসঙ্গতি ধরা পড়ে, তবে করদাতাকে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে হবে। করদাতা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোম্পানির ওপর থাকবে বিশেষ নজর: কোম্পানি করদাতাদের ক্ষেত্রে অডিট রিপোর্টে কাচামাল মজুতের তথ্য, ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, স্থায়ী সম্পদ, ব্যালান্স শিট ও লাভ-লোকসান হিসাব যাচাই করা হবে। এসব খাতে ভুয়া ব্যয় দেখানো বা আয়ের উৎস গোপন করলে কর নির্ধারণের পাশাপাশি জরিমানার বিধানও থাকবে।

এছাড়া কোম্পানির কাঁচামাল, মজুত, বেতন, ওভারহেড ব্যয় যাচাই, ব্যাংক লেনদেন ও সরবরাহকারীর তথ্য মিলিয়ে দেখা, ভ্যাট রিটার্ন ও ব্যাংক জমার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় মিলানো, ব্যাংক লেনদেনের সঙ্গে প্রদর্শিত ক্রয়-বিক্রয় যাচাই, পূর্ববর্তী বছরের সঙ্গে তুলনা করে জিপি রেশিও অস্বাভাবিক হলে তদন্ত করা হবে।

যেসব রিটার্ন অডিট হবে: আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা, ২০২৫ অনুযায়ী, করদাতাদের সব রিটার্ন অডিট করা হবে না। মোট দাখিলকৃত রিটার্নের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ অডিটের আওতায় আনা হবে। রিটার্ন নির্বাচনের পর করদাতাকে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ দেওয়া হবে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলে অডিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় কর পরিদর্শক মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে প্রমাণ সংগ্রহ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল প্রতিবেদন দেবেন।

স্বাভাবিক ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের (যেমন-কোম্পানি) জন্য প্রতিটি কর সার্কেলে একটি অডিট বাছাইকরণ টিম থাকবে, যা এনবিআর চূড়ান্ত করবে। পূর্ববর্তী এবং বর্তমান বছরের রিটার্ন যাচাই করে যদি আইনগত ও বাস্তব ত্রুটি থেকে রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তবে অডিটের জন্য বাছাই করা হবে।

আরো বলা হয়েছে, যথাযথ কারণ ও প্রমাণ ছাড়া ক্ষতি, শূন্য বা খুব কম আয়ের রিটার্নে কর রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে অডিটের জন্য বাছাই করা যাবে।

ব্যক্তিগত করদাতার অডিট প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে-করদাতা যদি ঋণ (ব্যাংক, গাড়ি, হাউজ লোন ইত্যাদি) নিয়ে থাকে, তবে প্রদত্ত সুদ ব্যয়ের তথ্য রিটার্নে দেখানো হয়েছে কি না যাচাই করা হবে।

জীবনযাত্রার মানের তথ্য বিবরণী আসবে অডিটের আওতায়: পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী প্রদর্শিত ব্যয়, প্রদর্শিত আয়-ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে কি না যাচাই করা হবে।

কর মামলা নিষ্পত্তিকালে করদাতার যেকোনো দাবি অগ্রাহ্যের ক্ষেত্রে, করদাতাকে শুনানির সুযোগ দিবেন, নোটিশ জারি করবেন, অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনার তার অধীনস্ত উপ কর কমিশনারের মাধ্যমে ১৮৩ বা ১৮৪ ধারায় করদাতার আয় ও আয়কর নির্ধারনের ক্ষেত্রে নিবিড় তাদারকি, দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতা প্রদান করবেন। উপ কর কমিশনার আয়কর আইনের ধারা ১৯৭১ (১) (খ) অনুসারে মামলার তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে যথা সম্ভব দ্রুত নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।

ঢাকা/নাজমুল/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়