ঢাকা     বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

৫ ব্যাংকের সম্পদ সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে হস্তান্তর

অর্থ উত্তোলন না করলে মুনাফা পাবে আমানতকারীরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫  
অর্থ উত্তোলন না করলে মুনাফা পাবে আমানতকারীরা

ফাইল ফটো

একীভূত করা পাঁচ ব্যাংকের চলতি, সঞ্চয়ী, স্থায়ী আমানত, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ, দায় ও চুক্তিসমূহ আইনগতভাবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ অনুযায়ী আমানতকারীরা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত উত্তোলন করতে পারবেন। এ লক্ষ্যে ব্যাংক রেজুলেশনের আওতাধীন ব্যাংকগুলোতে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। কোন গ্রাহক এ অর্থ উত্তোলন না করলে তিনি তার স্থিতির উপর বাজারভিত্তিক মুনাফা পাবেন।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ব্যাংক রেজুলেশন স্কিম ২০২৫ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাঁচটি ব্যাংকের চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে স্থানান্তর হয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদ পূর্তির আগে স্থায়ী আমানত পরিশোধযোগ্য নয়। আমানতকারীরা তাদের বিদ্যমান বকেয়া স্থিতির বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবে। তবে, নতুন আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগের সুযোগ নিতে পারবে।

পাঁচটি ব্যাংকে কর্মরত, অভিযোগ বা মামলা নেই এমন সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারী হিসেবে স্থানান্তর হবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালনা পর্ষদ চাকরির শর্তাবলি পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। কেউ লিখিতভাবে চাকরি না করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ইস্তফা দিতে পারবে।

ব্যাংক রেজল্যুশন ২০২৫ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, রেজল্যুশন স্কিম কার্যকর হওয়ার তারিখ হতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভিন্ন কোনো নির্দেশ জারি না করা পর্যন্ত, হস্তান্তরকারী ব্যাংকের নামে বা পরিচয়ে মুদ্রিত, প্রকাশিত বা ব্যবহৃত সকল চেকবই, ডিপোজিট স্লিপ, উত্তোলন স্লিপ, ভাউচার, ফরম, রসিদ, আবেদনপত্র এবং অন্যান্য সকল ব্যাংকিং দলিল, যে নামেই বা যে পরিচয়েই মুদ্রিত বা উপস্থাপিত হোক না কেন, এসব দলিলগুলো হস্তান্তরগ্রহীতা ব্যাংকের বৈধ ও অনুমোদিত দলিল বলে গণ্য হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নতুন ব্যবস্থাপনায় গ্রাহকের জমা অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। লেনদেন পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে চলবে। এই রেজল্যুশন প্রক্রিয়া-ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আস্থা সৃষ্টির জন্য একটি সংস্কারমূলক ও সক্রিয় পদক্ষেপ। নতুন ব্যাংকটিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও গভার্ন্যান্স শক্তিশালী করতে সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। 

এছাড়া সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমানতকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি তত্ত্বাবধানে উল্লিখিত সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমানতকারীর অর্থের সুরক্ষা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও আর্থিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার অগ্রগতি হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির স্থায়ী আমানত এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধনে রূপান্তর করা হবে। 

তবে, শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, জয়েন্ট ভেঞ্চার, বহুজাতিক কোম্পানি ও বিদেশি দূতাবাস এ বিধানের আওতায় পড়বে না।

এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক এই পাঁচটি ব্যাংকে সুশাসনের ঘাটতি, অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে আমানত, মূলধন ও সম্পদের ক্ষতি সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষিতে বিগত এক বছরের অধিক সময় বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ তারল্য সহায়তা দেয়। তবুও ব্যাংকগুলোর প্রত্যাশিত আর্থিক উন্নতি হয়নি। 

আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে রেজল্যুশনের আওতায় আনা হয় এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার জন্য গত ৫ নভেম্বর প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে ৫ ব্যাংককে একীভূত করে করা হয় সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক।

ঢাকা/নাজমুল/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়