ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘তালাকনামা আঁচলে বেঁধে মঞ্চে উঠেন মুখ ও মুখোশের বিলকিস’

আমিনুল ই শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৩ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘তালাকনামা আঁচলে বেঁধে মঞ্চে উঠেন মুখ ও মুখোশের বিলকিস’

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

আমিনুল ই শান্ত : সাদাকালো ক্যানভাস এখন রঙিন হয়েছে। রূপালি পর্দায় লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। কিন্তু সাদাকালো ক্যানভাসে যারা প্রথম তুলির আচর দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম অভিনেত্রী বিলকিস বারী।

বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমায় কৌতুক সাইফুদ্দিনের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেত্রী। সেসময় নারীদের অভিনয় করাটা ভয়ানক কঠিন ছিল। কারণ রক্ষণশীল পরিবার থেকে অনুমতি পাওয়া যেত না। তবু অভিনয় ভালোবেসে অনেকে সংসার ছেড়েছেন। সহ্য করেছেন সামাজিক তিরস্কার।

গুণী নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম জীবদ্দশায় ‘কমেডি আওয়ার’ শিরোনামে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, টেলিসামাদ। অনুষ্ঠানটি মূলত ছিল অভিনেত্রী বিলকিস বারীকে কেন্দ্র করে। অনুষ্ঠানটিতে অভিনয়ের প্রতি তার ত্যাগ, একাগ্রতাসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে এটিএম শামসুজ্জামান বিলকিস বারীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ‘বিলকিস বারী খুব বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন। তার দুটি ঘটনা আমার সামনে ঘটেছে। এক. আমাদের এলাকায় মাওলা সরদারের উঠোনে একটি নাটক হচ্ছিল। এতে অভিনয় করছিলেন বিলকিস। এসময় তার স্বামী বারী সাহেব এসে বললেন, ‘তোমাকে নাটক করতে দেয়া হবে না। এক্ষুণি আমার সঙ্গে যাবে।’ তখন বিলকিস বলেছিলেন, ‘এখন তো আমার স্টেজ। এই সময় আমি যেতে পারব না। একটু পরই শো শুরু হবে।’ এরপর বারী বললেন, ‘যদি সঙ্গে যাও তবে ভালো, আর যদি না যেতে চাও তবে এই মুহূর্তে আমি তোমাকে লিখিতভাবে তালাক দিব।’ এ কথা শুনে আমরা সবাই ঘাবরে গেলাম। কিন্তু বিলকিস বললেন, ‘ঠিক আছে তালাক দাও।’ বারী সাহেব তাৎক্ষণিকভাবে ঐখানে তালাকনামা লিখে দিলেন। আর বিলকিস ঐ তালাকনামা আঁচলে বেঁধে স্টেজে অভিনয় করলেন।’

দ্বিতীয় ঘটনা প্রসঙ্গে এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘নির্দেশক আলী ইমাম। তিনি খুব সিনসিয়ার পরিচালক ছিলেন। ৭টা ১মিনিটে তার পর্দা উঠতেই হবে। তাই সব শিল্পী যথাসময় উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু ঐ দিন প্রথম দৃশ্য ছিল বিলকিস বারীর। কিন্তু তিনি আসলেন প্রায় সাড়ে ৭টায়। তিনি আসার পর আলী ইমাম যতটুকু পারলেন তিরস্কার করলেন। তারপর নাটকের পর্দা উঠল। নাটকের শেষ পর্যায়ে বিলকিস বারী ইমামকে বললেন, ‘এ দিকে আয়। তুই যে আমাকে গালাগালটা করলি, কেন আমি দেরি করেছি তা শোন, আজ আমার ছেলেটা মারা গিয়েছে। ছেলেটার দাফন শেষ করে তোর স্টেজে এলাম। এ কথা শুনে ইমাম বিলকিসের পা ধরে হাউ-মাউ করে কান্না জুড়ে দেন।’

তিরিশের দশকে কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন বিলকিস। বাবা দেবেন্দ্রনাথ রায় তার নাম রেখেছিলেন বীনা রায়। তৎতকালীন সময় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা জিল্লুর বারীকে ভালোবেসে বিয়ে করে হন বিলকিস বারী। ১৯৪৭ সালের পর পর স্বামীসহ চলে আসেন ঢাকায়। অভিনয় ক্যারিয়ারে কখনো অভিনয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আপোস করেননি এই মহিয়সী নারী।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ আগস্ট ২০১৬/শান্ত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়