ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যেখানে স্বপ্ন বেচাকেনা হয়

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১১, ১০ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:২৬, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
যেখানে স্বপ্ন বেচাকেনা হয়

রুপালি জগতের ঝলমলে আলোয় নিজেকে রঙিন করবেন এমন স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। কেউ নিজেকে নায়ক, আবার কেউ নিজেকে নির্মাতা বা নায়িকা ভাবতে শুরু করেন। আর এই স্বপ্নের বুনন কখনো শুরু হয় চলচ্চিত্রের মানুষের সঙ্গে পরিচয় বা চায়ের আড্ডার মধ্য দিয়ে। আর এই চায়ের আড্ডাটা বেশি জমে উঠে রাজধানীর মিডিয়া গলিতে।

‘মিডিয়া গলি’ নামটি মিডিয়ার সবার কাছেই অতি পরিচিত। তবে কাগজে-কলমে এই নামের কোনো হদিস নেই। মিডিয়ার লোকজন এই গলির সামনে বসে আড্ডা দেন বলেই একে মিডিয়া গলি বলা হয়। রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত এটি। সারা দিন এখানে একটি ‘মাছিও’ থাকে না! কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে একে একে আসতে শুরু করেন চলচ্চিত্র ও নাটকের পরিচালক, বিনোদন সাংবাদিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ এই অঙ্গনের কলাকুশলীরা।

বসার কোনো নির্ধারিত জায়গা এখানে নেই। দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে শুরু হয় সিনেমা নির্মাণ থেকে মুক্তির পরিকল্পনা। একজন পরিচালক স্বপ্ন দেখেন সিনেমা বা নাটক নির্মাণ করে কীভাবে মুক্তি দেবেন। আবার একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী স্বপ্ন দেখেন নিজেকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠার। সিনেমা বা নাটকের অনেক মিটিং এখানেই হয়।

শিল্পী, নায়ক বা নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এই গলিতে আসেন নির্মাতা-পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে। পরিচালকের মুখে সিনেমার গল্প শুনে মুহূর্তেই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যান চূড়ায়। কখনো এসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় আবার কখনো স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়! এভাবেই প্রতিদিন রাতে এই গলিতে স্বপ্নের বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন চায়ের আড্ডায় অসংখ্য সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। যদিও বাস্তবে সেসব সিনেমার কটা আলোর মুখ দেখে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়! অনেকে যেমন এই আড্ডায় স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেন, তেমনি আবার কেউ কেউ এখান থেকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

এফডিসিতে অনেকের প্রবেশের সুযোগ নেই। যেকারণে এই গলিতে এলে অনেকের সঙ্গে আড্ডার সুযোগ মেলে। অনেকেই কাজের সন্ধানেও এই গলিতে আসেন। কারণ এখানে মিডিয়ার লোকজনের আসা-যাওয়া। দেখা হলে হয়তো কাজের প্রস্তাব পাবেন। আবার কেউ কেউ আসেন পরিচিতজনদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। এই আড্ডা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।

চলচ্চিত্র পরিচালক শামীমুল ইসলাম শামীমের অফিস ছিল মিডিয়া গলির উল্টো দিকে। তা স্মরণ করে এ পরিচালক রাইজিংবিডিকে বলেন, চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানূর রহমান সোহান, সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন এবং আমার অফিস ছিল মিডিয়া গলির অপরদিকে। অনেকগুলো মিডিয়া হাউজ এখনো আছে। এক সময় এসব হাউজে রাতভর কাজ হতো। সিনেমার মহরত হতো। যে কারণেই একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য চা খেতে বের হতো গলির সামনে। এভাবেই মূলত এই গলিতে আড্ডা জমে উঠতে শুরু করে।

এখন আর মিডিয়া গলিতে আড্ডা জমে না। মিডিয়া গলির উল্টো দিকের গলি হলো মুক্তিযোদ্ধা গলি। আর বর্তমানে মিডিয়া গলির আড্ডাটা এখন মুক্তিযোদ্ধা গলিতে হয়। এখানে নিয়মিত চা বিক্রি করেন রফিক। বিষয়টি উল্লেখ করে রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন—রাস্তার ওই পাশেই (মিডিয়া গলি) আগে আড্ডা বসতো। ওখানে রাস্তার কাজ চলার কারণে মানুষ দাঁড়াতে পারছিলেন না। এজন্য এখন মুক্তিযোদ্ধা গলির সামনে এসে দাঁড়ায়। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভ্যান নিয়ে চলে আসি, মধ্যরাত পর্যন্ত থাকি।

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়