ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মিডিয়ায় মেয়েরা বেশ স্বাধীন: অর্ষা

নাজিয়া হক অর্ষা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ৮ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৬:০৮, ৮ মার্চ ২০২১
মিডিয়ায় মেয়েরা বেশ স্বাধীন: অর্ষা

নাজিয়া হক অর্ষা

বিশ্বব্যাপী অনেক দিবসই পালিত হয়ে থাকে। নারী দিবস উদযাপান নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরণের ভাবনা আমার ভেতরে কাজ করে। ম্যাসকুলিন ও ফেমিনিন দুটি জেন্ডার। এটাকে কেন্দ্র করে দিবস উদযাপন করা পছন্দ করি না। কারণ যখন থেকে আদম তখন থেকেই হাওয়া। বিষয়টি একসঙ্গে প্রতিষ্ঠিত। এখানে নারী দিবসকে প্রধান্য দেওয়ার হিসাবটা কী, তা আমার মাথায় আসে না। কেন নারী দিবস উদযাপন করা হয় তা এখনো বোঝে আসে না!

যেসব নারীরা বড় বড় মুভমেন্টে ভূমিকা রেখেছেন, এদিন তাদেরকে নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করা হয়। কিন্তু প্রত্যেক নারী তার ব্যক্তিগত জীবনে বড় বড় মুভমেন্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু কিছু গল্প সামনে থাকে, আর হাজার হাজার গল্প অগোচরে রয়ে যায়। সুতরাং আমি নারী দিবস পালনের পক্ষপাতি একদমই না। কারণ শুরু থেকেই দুটি জেন্ডার সমানতরালভাবে বিদ্যমান। তাহলে কেন শুধু ফেমিনিন জেন্ডার নিয়ে এত মাতামাতি?

মিডিয়াতে নারীরা কতটা স্বাধীন ও নিরাপদ—এ প্রশ্ন অহরহ শোনা যায়। আসলে স্বাধীনতা নিজের অনেক বড় একটি বিষয়। এটি এমন একটি গুণাবলী যা, ছোটবেলা থেকে সঙ্গে নিয়ে বড় হয়ে উঠতে হয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষশাসিত। স্বাভাবিকভাবে পুরুষরা অধিকাংশ নারীকে ডমিনেট করে। আমার মনে হয়, এখনকার প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা সমানে সমান। তারা একইসঙ্গে পড়াশোনা করছে, চাকরি করছে, সমানতালে চলছে। কিন্তু স্বাধীনতাটা একান্তই নিজের একটা গুণ। যদি কোনো নারী মনে করেন স্বাধীন, তাহলে সে সব জায়গায় স্বাধীন, আর পরাধীন মনে করলে পরাধীন। এই জায়গায় মিডিয়া বা অন্য কোনো প্রফেশন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না।

আমার কাছে মনে হয়, মিডিয়ার মেয়েরা বেশ স্বাধীন। অন্তত কেমন গল্প বা চরিত্রে কাজ করতে চায় তা তারা নির্ধারণ করতে পারে। নিজের পছন্দমতো জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাতে পারে। আবার প্যারালালি কিছু জটিলতাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়েই মিডিয়া। যার কারণে মিডিয়াতে মেয়েরা কতটা স্বাধীন বা পরাধীন তা বিচার করার সুযোগ আমার নেই। আমি আমারটা বলতে পারব অন্যেরটা না। কারণ বাহ্যিকভাবে দেখতে সবাইকে ঠিকঠাক লাগে, ভেতরে কে কোন জটিলতার মধ্যে আছে তা বোঝা মুশকিল।  

তবে ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যায় পড়িনি। আমার জায়গা থেকে আমি খুবই স্বাধীনচেতা একজন মানুষ। একদম মুখের উপর ‘না’ বলে দিতে পারি। আমি কোনো কিছুতে বাধ্য নই। আমি সম্পূর্ণ কাজটা নিজের ভালো লাগার জায়গা থেকে করি। কাজের প্রতি শতভাগ সৎ থাকি। যার কারণে এখন পর্যন্ত লড়াইটা করে যেতে পারছি। কেউ যখন কাজের জন্য ফোন করেন, তখনই বুঝে ফেলি এখানে জটিলতা আছে কি নাই। সুতরাং শুটিং সেটে গিয়ে জটিলতায় পড়তে হয় না। ফোনে যখন গল্প, পরিচালনা নিয়ে কথা হয়, তখনই বিচার করি ওই কাজের ভাবনার সঙ্গে আমার ভাবনার মিল আছে কি নাই! আবার কথা বলার মধ্যে ভদ্রতা বা ম্যানারিজম থাকে। সেটা ভালো লাগলে ‘হ্যাঁ’ বলি, নাহলে ‘না’।

এত বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অপর প্রান্তের কলেই টের পাবেন কাজটি কতটা ভালো হবে আর কতটা খারাপ! কিংবা পরিচালকের কাজটি করার যোগ্যতা কতটা রয়েছে। তাছাড়া চিত্রনাট্য দেখার পরও বিচারের সুযোগ থাকে। সুতরাং ব্যক্তিগত জীবনে কোনো ধরণের জটিলতায় পড়িনি। ভালো না লাগলে ‘না’ করে দিয়েছি। স্বাভাবিক কারণে আমাকে কোনো সংকটে পড়তে হয়নি।

আমার মনে হয়, বর্তমান প্রজন্মের মেয়েরা আরো বেশি কাজের সুযোগ পাচ্ছে। কারণ প্রচুর চ্যানেল। প্রচুর মিডিয়া রয়েছে। এখনকার কাজের ধরণও একটু আলাদা। সবাই সবার সঙ্গে যুক্ত থাকে। একসঙ্গে হ্যাংআউট করে, সিনেমা দেখে, ডিনারে যায়। এতে করে ব্যক্তিগত বন্ধনটা আরো শক্ত হয়। এই প্রজন্ম একটু ভিন্নভাবে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরা নিজেদের মতো এগিয়েছি। আমার মনে পড়ে না সহকর্মীদের সঙ্গে কখনো ডিনার বা সিনেমা দেখতে গিয়েছি। এটা খুবই বিরল ব্যাপার। সেই জায়গা থেকে মনে হয়, এই প্রজন্ম অনেক বন্ধুত্বপরায়ণ ও প্রাণবন্ত। মনে হয় না এরা কোনো জটিলতা অনুভব করে। যারা জটিলতা অনুভব করে তারা হয়তো দুর্বল, নিজেদের বিষয়ে দ্বিধান্বিত। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ এখন পর্যন্ত পিক করতে পারছে না। এ সমস্ত ঢিলেমি আমাদের মধ্যে আছে, থেকেও যাবে। যারা এসব বিষয় উৎরে যাবে এবং স্পষ্টবাদী তাদের কোনো জায়গায় জটিলতা নেই।

শ্রুতিলিখন: আমিনুল ইসলাম শান্ত

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়