লালনকে নিয়ে যত চলচ্চিত্র
আমিনুল ই শান্ত || রাইজিংবিডি.কম
লালনকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের পোস্টার
আমিনুল ই শান্ত : মানবতাবাদী বাউল সাধক লালন সাঁই। কালে কালে বেলা অনেক হলেও এ মানুষটির জীবন-দর্শন দিনে দিনে তার ভক্তদের তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। তাকে নিয়ে অসংখ্য বইও লেখা হয়েছে। দুই বাংলায় নির্মিত হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, নাটক, তথ্যচিত্র প্রভৃতি। লালন সাঁইজিকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়েই এ রচনা।
লালন ফকির : মহাত্ম লালন সাঁইকে নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। ‘লালন ফকির’ শিরোনামের এ ছবিটি ১৯৭২ সালে ঢাকায় মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্রে লালন সাঁইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন উজ্জ্বল (পরবর্রীতে ঢালিউডে যিনি মেগাস্টার হিসেবে পরিচিতি পান)। এতে আরো অভিনয় করেন কবরী, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির গানে কণ্ঠ দেন আবদুল আলীম, নীনা হামিদ এবং আরো অনেকে।
নাট্যকার আসকার ইবনে শাইখ লালনকে নিয়ে একটি নাটক লিখেছিলেন। ঢাকার নাট্যমঞ্চে এ নাটকটি বেশ কয়েকবার মঞ্চায়িতও হয়েছিল। স্বাধীনতার পর পর এ নাটকটি অবলম্বনেই সৈয়দ হাসান ইমামের সংলাপ, চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও প্রযোজনায় নির্মিত হয় সাঁইজিকে নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র ‘লালন ফকির’।
লালন ফকির : মানবতাবাদী বাউল সাধক লালনকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তার পরিচালনায় নির্মিত ‘লালন ফকির’ সিনেমাটি ১৯৮৭ সালে কলকাতায় মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্রের সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেন মন্মথ রায়। এতে লালনের ভূমিকায় অভিনয় করেন অসীমকুমার। মতি বিবি চরিত্রে সন্ধ্যা রায় ও সিরাজসাঁই চরিত্রে অভিনয় করেন অসিত বরণ।
লালন : ছাত্রজীবন থেকেই তানভীর মোকাম্মেলের চিন্তা-ভাবনাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বাউল সাধক লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শন। তার এ আকর্ষণ থেকেই ১৯৯৬ সালে সাঁইজিকে নিয়ে নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘অচিন পাখি`। এটি তৈরি করার সময়ই তার মনের ভেতর দানা বাঁধে অতৃপ্তি। ২০০৪ সালে লালনকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তা বাস্তবায়ন করেন।
তানভীর মোকাম্মেলের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘লালন’ চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। এছাড়া আরো অভিনয় করেন শমী কায়সার, আজাদ আবুল কালাম, রামেন্দু মজুমদার, চিত্রলেখা গুহ, ইয়াসমীন তামান্না তিথি, নাজনীন চুমকি প্রমুখ। সাঈদ সাবাব আলী আরজু সঙ্গীত পরিচালনায় এ ছবির বেশিরভাগ গানে কণ্ঠ দেন লালন আখড়ার বাউলশিল্পীরা।
দেশের চেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ চলচ্চিত্রটি বেশি প্রশংসিত হয়। ১৪০ মিনিটের এ চলচ্চিত্রে লালন চরিত্রে অভিনয় করে রাইসুল ইসলাম আসাদ দশকের মন হরণ করেন।
মনের মানুষ : ২০১০ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে লালন সাঁইকে নিয়ে নির্মিত হয় ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্র। ইতিপূর্বে লালনকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে এটিই বেশি দর্শকপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন গৌতম ঘোষ। ২০১০ সালে একই সময় ঢাকা ও কলকাতায় মুক্তি পায় এ সিনেমাটি।
গৌতম ঘোষের সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রে লালনের ভূমিকায় অভিনয় করেন কলকাতার খ্যাতিমান অভিনেতা প্রসেনজিৎ। বাণিজ্যিকধারার এ অভিনেতা তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়টা দেখান এ ছবিতে। সিরাজ সাঁইয়ের ভূমিকায় রাইসুল ইসলাম আসাদও মনে রাখার মতোই অভিনয় করেন। এতে আরো অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী, পাওলি দাম, প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়, তাথৈ, চম্পা, হাসান ইমাম প্রমুখ।
এ ছবির সংগীত পরিচালনা করেন গৌতম ঘোষ। গান নিবাচনও ছিল অসাধারণ। বরাবরের মতোই দৃশ্যায়নে পরিচালকের মুন্সিয়ানা মুগ্ধ করে দর্শকদের। ১৫০ মিনিট দৈর্ঘের এ চলচ্চিত্রটি নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। বিশেষ করে লালনের মানবধর্মে বিশ্বাসী অথচ কোনো সূত্র ছাড়াই তাকে হিন্দু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ কারণে বিতর্কের ঝড় ওঠে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মধ্যে।
সাধারণ দর্শকদের কাছে ‘মনের মানুষ’ বেশ সমাদৃত হয়। চলচ্চিত্রটি ৪১তম ভারত ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্রর পুরস্কার লাভ করে।
অন্ধ নিরাঙ্গম : হাসিবুর রেজা কল্লোল তার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বাউল লালনকে নিয়ে। ‘অন্ধ নিরাঙ্গম’ শিরোনামের এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১১ সালে। এ সিনেমায় লালনের জীবনী তুলে ধরা হয়নি। এতে সাঁইজির মানবতাবাদী দর্শন আর তার ভাবাদর্শের অনুসারিদের বিভেদের মধ্যে লালনের অনুসন্ধান করা হয়েছে।
একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও প্রশংশিত হওয়া এ চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, সঞ্জীব আহমেদ, রিতু সাত্তার, ফখরুজ্জামান চৌধুরী, আমিনুর রহমান বাচ্চু, শিহাব পারভেজ, ইমদাদ ফকির, লাভলী ফকিরানী, মিডারি কারটিস, মাগালি লাভিরাত্তি, মাইকেল কোল, দিয়ারমাইদ স্পাইরো, আনুশেহ্ আনাদিল, শফি মণ্ডল প্রমুখ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ অক্টোবর ২০১৪/শান্ত/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম