ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘আলিয়ানাস রং’-এ সফল উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা

শিরীন সুলতানা অরুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ১৬ জুন ২০২১  
‘আলিয়ানাস রং’-এ সফল উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা

কানিজ ফাতেমা,জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে । চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। বিয়ের পরে বর্তমানে রাংগামাটিতে  বসবাস করছেন ফাতেমা।

লেখাপড়া করে সচরাচর সবাই চাকরি  নামক সোনার হরিনের পেছনে ছোটে। কিন্তু ফাতেমা তা কখনই করে নি । সবসময় তার ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করার। গৃহিণীর পাশাপাশি নিজস্ব পরিচয় এবং চাকরীজিবী স্বামীকে একটু সহযোগীতার লক্ষ্যে ব্যবসা করার পরিকল্পনা ছিল তার। ফাতেমা ভাবতেন দেশের চলমান পরিস্থিতেতে একটাকা আয় করতে পারলেও তা অনেক বড় কিছু। নিজের পরিবার, সন্তান ও নিজের জন্য কিছু করায় ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য।

চাকরির দিকে আগ্রহ না থাকায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল অনেক বেশি। তাই স্বামী সংসার সামলিয়ে সিদ্ধান্ত নেন অনলাইনে উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই চিন্তা থেকেই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা নির্ভর ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড    ই-কমার্স ফোরাম) যুক্ত হন। এভাবে সেখান থেকে  সবার পোস্ট পড়ে নিজের ভিতরের প্রতিভাকে বের করে আনার চেষ্টা করেন ফাতেমা।

‘আলিয়ানাস রং’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শুরু করে দেন অনলাইনে নিজের ব্যবসা। দেশীয় সব রকমের থ্রি-পিস ও বাচ্চাদের পোশাকের মত পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ব্যবসা শুরুর প্রথম অর্ডার পান উই থেকেই। তারপর থেকে ফাতেমা একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি। বলা চলে উই না থাকলে তার ব্যবসাতেই আসা হত না।

নিজের ব্যবসার কথা বলতে গিয়ে কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘যেহেতু বউ হিসেবে রাঙ্গামাটিতে থাকি তাই আমার জন্য উদ্যোক্তা হওয়াটা তেমন সহজ ছিল না। প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতাম নানা ভাবে। পরপর ছোট দুই বাচ্চার মা ছিলাম। ওদের সামলিয়ে কাজ করাটা অনেক কষ্টকর। তার ওপর সব জায়গা ভালো ভাবে চিনতাম না। পণ্যের সোর্সিং করা অনেক কঠিন ছিল। উপকরণ পেতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের উপর নির্ভর করতে হতো। পরে স্বামীর সহযোগিতায় সব ধীরে ধীরে  সহজ হয়ে ওঠে আলহামদুলিল্লাহ্‌।

শুরুতে রাঙামাটির  ঐতিহ্যবাহী পণ্য  পিনন ও ঝুড়ি ব্যাগ নিয়ে ব্যবসা করতাম। পরবর্তীতে দেশীয় থ্রি-পিস, বেবীড্রেস এবং রাঙামাটির পণ্যও পেজের কালেকশনে রাখি।এছাড়াও ব্যবসার প্রথম দিকে মনে হতো রাঙামাটির ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলি  সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। পরবর্তীতে দেখলাম গত বছর ঈদের সময় বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে অনলাইনে তেমন কেউ কাজ করে না। যেহেতু বেবীড্রেস বানানোর কাজটা আমি ভালো পারি। আর এই কাজে আমার আনন্দ রয়েছে। তাই এমন পণ্য   নিয়ে কাজ করার চিন্তা করেছিলাম’।

তিনি আরও বলেন, ‘কোন কাজই সহজ হয়না। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেএে বেশিই বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়। তবে আমার পরিবারের সদস্যরা আমার কাজকে অনেক সাপোর্ট ও সহযোগিতা করেছে সবসময় । এমন কাজের সুযোগ প্রদানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবশ্যয় শুকরিয়া জানাই। আমার পরিবার, আত্নীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধব যারা সবসময় আমার উদ্যোগকে সাপোর্ট ও সহযোগীতা করে যাচ্ছে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবশেষে  রাজিব স্যারের শিক্ষা ও নিশা আপুর উইর প্রতি রইল অনেক কৃতজ্ঞতা’।

ব্যবসার শুরুতে একজন ক্রেতা থকে ৭০০ টাকার অর্ডারকৃত পণ্যের ডেলিভেরির পর আর ঘুরে গিয়েছে ভাগ্যের চাকা। চৌদ্দ মাসের উদ্যোক্তা জীবনে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার পণ্য শুধু অনলাইনেই বিক্রি হয়েছে । পেয়েছেন প্রবাসী ক্রেতাদেরও । যা ফাতেমার ব্যবসার সফলতার একটি কারন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনলাইন ব্যবসা বা তার উদ্যোগকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। দেশের ৬৪ টি জেলায় ‘আলিয়ানাস রং’- এর পণ্য পৌছে দেওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য । তিনি চান তার পণ্য একসময় খুব জনপ্রিয় হবে দেশ ও বিদেশে ।

লেখকঃ স্বত্বাধিকারী, এসএস এগ্রো প্রোডাক্ট এবং রাংগামাটি,খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলা কন্ট্রিবিউটর লেখক, রাইজিংবিডি উদ্যোক্তা/ ই-কমার্স পাতা ।

রাঙামাটি/ সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়