ঢাকা     শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বীর প্রতীক আলতাফ হায়দার এখন একা

বিলাস দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বীর প্রতীক আলতাফ হায়দার এখন একা

আলতাফ হায়দার

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : জেলা শহরের আলাউদ্দিন শিশুপার্কে ১৯৭১-এর ৮ ডিসেম্বর প্রথম বিজয়ের পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হায়দার (৭৯) আজ নিঃস্ব-নির্বাক। কেউ তার খবরও রাখেন না। বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অসুস্থতা ও অসচ্ছলতায় জর্জরিত ’৭১-এর এই বীর যোদ্ধার জীবন কাটছে বড়ই একা। এরপরও জীবনের অন্তিম আকুতি ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার’।

 

১৯৩৭ সালের  ১৫ জুন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের জন্ম নেন বীর প্রতীক আলতাফ হায়দার। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ’৬৫-এর পাক-ভারত যুদ্ধে শিয়ালকোটের রণাঙ্গনে নায়েকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৭০-এর দশকে দেশের উপকূলে বন্যা হলে তিনি নিজ এলাকায় ফিরে আসেন।

 

এখান থেকেই ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং  নবম সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।  মুক্তিযুদ্ধকালীন মির্জাগঞ্জ উপজেলা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।  এ সময় তার নেতৃত্বে ‘হায়দার বাহিনী’ নামেই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মির্জাগঞ্জ ছাড়াও বাউফল এবং বরগুনা জেলার বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা এলাকায় পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে প্রথমে বামনা থানা আক্রমণ করে ওই জনপদ হানাদার মুক্ত করে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ান তিনি।

 

এরপর বেতাগী, পাথরঘাটা হয়ে ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা সদর পটুয়াখালী পৌঁছান। পটুয়াখালীকে পাকহানাদার মুক্ত ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম আবুল কাশেম উকিলকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ আলাউদ্দিন শিশুপার্কে ওড়ান স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি ও তার বাহিনীর লোকজন প্রথম পটুয়াখালী শহরে প্রবেশ করেন।

 

মুক্তিযুদ্ধের সেই আলতাফ হায়দার আজ নানা রোগে জর্জরিত। তারপরও জীবনের অন্তিম ইচ্ছা য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার। তিনবার ব্রেইন স্ট্রোক করার পর তিনি এখন শয্যাশায়ী। স্ত্রী রুনু বেগম, পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তার পরিবার। ছোট ছেলে নেয়ামত উল ইসলামের অকাল মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন। মাসিক আট হাজার টাকা ভাতা দিয়ে তার বড় সংসার চালানো ভীষণ কষ্টের।

 

আলতাফ হায়দারের স্ত্রী রুনু বেগম জানান, স্বামীর অসুস্থতায় তিনি উদ্বিগ্ন। যাদের পাশে থাকার কথা তারাও আজ উদাসীন। এটাই কি নিয়তির নির্মম পরিহাস?

 

পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ হালিম জানান, যুদ্ধোকালীন এ অঞ্চলে আলতাফ হায়দারের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তৎকালীন বিজয়ের দিনে ৮ ডিসেম্বর তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে পটুয়াখালীতে জাতীয় পতাকা নিয়ে উল্লাস করেছিলেন। আজ তিনি অবহেলিত, এটা মনে নেওয়া কষ্টকর। সবাইকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

 

 


রাইজিংবিডি/পটুয়াখালী/৮ ডিসম্বের ২০১৫/বিলাস দাস/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়