ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তারাশঙ্কর আগে রাজনীতিক, পরে লেখক

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৫ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তারাশঙ্কর আগে রাজনীতিক, পরে লেখক

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

শাহ মতিন টিপু : সাহিত্যিক হিসেবে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচিত হলেও তাঁর  রাজনৈতিক জীবনও সমৃদ্ধ ছিল৷  লেখক হওয়ার অনেক আগেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন  ৷

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় তারাশঙ্করের বয়স মাত্র ৭ বছর৷ কিন্তু ওই শিশুপুত্রের হাতে রাঁখি বেঁধে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা । একদিকে পিতার রাজদ্রোহী মনোভাব অন্যদিকে মায়ের দেশপ্রেম তাঁকে প্রভাবিত করেছিল৷ মূলত শৈশব-কৈশোর থেকে তাঁর রাজনীতির প্রতি আগ্রহের অন্যতম কারণ মাতৃকূলের রাজনীতির সংশ্রব।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের  জন্মদিন ছিল গতকাল। ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই  তিনি বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মায়ের নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রভাবতী দেবী। তারাশঙ্করের বাল্যজীবন কাটে গ্রামের পরিবেশেই। লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬সালে এন্ট্রান্স (প্রবেশিকা) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে (এখনকার আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। তবে স্বাস্থ্যভঙ্গ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া তাঁর থেকে গেছে অসম্পূর্ণ ই।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হলেও যুবাবস্থায় জড়িয়ে পড়েন গান্ধীজির ডাকা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে৷ তখন থেকে হয়ে পড়েন শর্তহীন গান্ধীবাদী একজন কংগ্রেসম্যান। আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি গ্রেফতার হন এবং কিছুদিন জেলও খাটেন।কিন্তু ওই কারাগারে থাকতে থাকতে তাঁর সাহিত্য চর্চার প্রকাশ ঘটে। সেখানেই তিনি লেখা শুরু করেন ‘পাষাণপুরী’ আর ‘চৈতালী ঘূর্ণি’।

এদিকে বাংলায় কংগ্রেস রাজনীতির উপদলীয় কোন্দল ও সংঘাতের কারণে তিনি ক্রমশ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারান ৷ অন্যদিকে আরও বেশি করে মন দেন লেখালেখিতে৷

১৯২৯ সাল থেকে ৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর কালজয়ী উপন্যাসগুলো রচনা করেছিলেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর ক্রমান্বয়ে তিনি রচনা করেন ‘রায় কমল’ (১৯৩৫),  ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৩৯), ‘কবি’ (১৯৪২), ‘গণদেবতা’ (১৯৪৩), ‘পঞ্চগ্রাম’ (১৯৪৪), ‘মন্বন্তর’ (১৯৪৪), ‘সন্দীপন পাঠশালা’ (১৯৪৬), ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’ (১৯৪৬), আর ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৬-৪৭)৷

লেখালেখির দিকে ঝুকঁলেও রাজনীতির ছোঁয়া তিনি এড়াতে পারেননি৷ ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন৷ ১৯৬০ সালে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য করে পাঠান হয়৷

 

তাঁর লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা।

ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তাঁর সব লেখায় মানুষের মহত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,সেটাই তাঁর লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তাঁর অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার অজয় কর সহ বেশ কিছু পরিচালক তারাশঙ্করের লেখাকেই ভিত্তি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন৷

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে অবশ্যই ছাপিয়ে গিয়েছিল তাঁর লেখক স্বত্তা৷ তাঁর সাহিত্য চর্চার ফসল হিসেবে পাওয়া যায় ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পের বই, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণকাহিনি ।

বিংশ শতাব্দীর এই লেখকের ঝুলিতে রয়েছে রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ খেতাব। তারাশঙ্কর ১৯৪২-এর বীরভূম জেলা সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন এবং ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংগঠনের সভাপতি হয়েছিলেন। তিনিই আবার ১৯৭০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন৷

১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই সাহিত্যিকের জীবনাবসান হয়৷

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৬/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়