ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ক্যাম্পাস টু ক্যাম্পাস : দেখবো এবার জগৎটাকে

তানভীর সিদ্দিক টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যাম্পাস টু ক্যাম্পাস : দেখবো এবার জগৎটাকে

সুনির্মল বসু ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতায় পুরো বিশ্বকে পাঠশালা বিবেচনা করে নিজেকে তার ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। যেখান থেকে সবসময়ই তিনি নতুন কিছু শিক্ষা লাভ করে থাকেন। এই ছাত্রত্ব অমর, শেখার পরিধিও অসীম। কিন্তু কিতাবি পড়ালেখা গণ্ডিবদ্ধ, যার শুরু হয় বিদ্যালয় থেকে, মহাবিদ্যালয় হয়ে ইতি টানে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি লাতিন ইউনিভার্সিতাস (universitas) শব্দের বঙ্গানুবাদ। ইউনিভার্সিতাস শব্দের মূল অর্থ একত্রকরণ, সংঘ বা সমিতি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে একত্রীকরণের মাধ্যমে নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশে নতুন কিছু শেখার জন্য উৎসাহিত করবে। এটা হবে সবার জন্য উন্মুক্ত।

দেশে যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজের ক্যাম্পাসের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে দৃঢ প্রতিজ্ঞ, ঠিক সেই সময় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ‘সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন’ বিভাগের শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু শেখার ধারণাকে কেন্দ্র গড়ে তুলেছে ‘ক্যাম্পাস টু ক্যাম্পাস’। সারাদেশের যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়টি পাঠ্যক্রম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এই সংগঠনের সদস্য শিক্ষার্থীরা সেসব ঘুরে দেখতে চান। শুধু তাই নয়, একে একে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সাথে নিজেদের পরিচিতি ঘটাতে চান।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর ছাইফুল ইসলাম মাছুম এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) এর ইয়ানুর হোসেন এই অভিনব ধারণার মূল উদ্যোক্তা। দুজনেই সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। স্বপ্ন দেখেন একদিন বড় মাপের সাংবাদিক হবেন। তারা মনে করেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি অংশ আগামী দিনে তাদের সহকর্মী হবে। তারা যদি আগে থেকেই তাদের সহকর্মীদের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক গড়তে পারেন তাহলে তাদের ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আরো অনেক বেশি অনুকূলে থাকবে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় ঘটানোর মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব হবে।

সংগঠনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ক্যাম্পাস টু ক্যাম্পাস’ হাজির হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ধারণাটি নতুন হওয়ায় খুব বেশি মানুষ সাড়া না দিলেও মাছুম এবং ইয়ানুরের সাথে যুক্ত হয় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের তিন শিক্ষার্থী- আমিনুর রহমান হৃদয়, হাসান ওয়ালী ও মেসবাহ হাসান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগ ঘুরে দেখা, শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল ও মতামত বিনিময় করা, তাদের সাথে একত্রে ক্লাস করা, ক্যাম্পাসে খাওয়া, হলে থাকা, আশেপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা, ক্যাম্পাসের সংবাদকর্মী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হওয়া, সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলীর সাথে সাক্ষাৎ পর্ব শেষে তারা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হয়। দিনশেষে সারাদিনের সকল পরিচিত নতুন বন্ধুদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তারা লাইভের আয়োজন করে। সেখানে তারা সারাদিনে নিজেদের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে ভালোলাগা-মন্দলাগা, পাওয়া-না পাওয়া ব্যক্ত করে। সমবেত কন্ঠে গান ধরে। যেন অনেক দিনের পুরোনো বন্ধুরা একসাথে বসে আড্ডায় মেতেছে অনেকদিন পর! নিয়মিত পর্বের সাথে স্মৃতির পাতায় অভিজ্ঞতা হয়ে উঁকি দিয়েছে রাজশাহীর রেডিও পদ্মা, কালাই রুটি আর বর্ণালী মোড়ের চা।

একই বছরের নভেম্বর মাসে তারা পা রেখেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। উদ্যোগটি সম্পর্কে জানতে পেরে অনেকেরই ভালো লাগা কাজ করে তখন। আগের পাঁচ জনের সাথে আরো নতুন ৪ জন সফরসঙ্গী যুক্ত হয়ে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় নয়-এ। পূর্বের ন্যায় সকল কার্যক্রম শেষ করে তারা সেখানকার ভাসমান হোটেল পরিদর্শন, আহসান মঞ্জিল দর্শন এবং বুড়িগঙ্গায় নৌকা ভ্রমণ দিয়ে যাত্রা শেষ করে।

২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ, ফজলুল হক কলেজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মে মাসে হাজির হয় সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণে। পূর্বের ন্যায় এই সফরগুলোতেও তারা একইভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। অভিজ্ঞতার ঝুলি আরও সমৃদ্ধ হতে থাকে তাদের। এই কার্যক্রম দেখে আরো অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহী হয় এসব সফরে অংশ নিতে।

সম্প্রতি সেপ্টেম্বর মাসে তারা অষ্টম ক্যাম্পাস হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-তে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন এবং মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহ মোট ১৩ জনের দলটি অংশ নেয় এই সফরে। পূর্বের ন্যায় সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে বিইউপি’র ছাত্রদের পরিবহনের জন্য পরিচালিত বাসে চড়ে বাড়ি ফেরেন তারা।

এভাবেই হয়তো একদিন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, উদ্যোক্তারা এমনটাই বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চলতে থাকা শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এর অংশ হিসেবে একতা, শিক্ষা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যগুলো প্রতিফলিত হোক। শিক্ষার্থীদের মাঝ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, পারস্পরিক কলহ, ক্ষমতার লড়াই, আমিত্ব, দম্ভ, মাদক, র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন করার বিকৃত মানসিকতা, বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি সকল নেতিবাচক দিক বিদায় নেবে এবং তারা নিজেদের মধ্যে পাশাপাশি সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সাথে সৌহার্দ্য বিনিময়ের মাধ্যমে সুখী-সুন্দর একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে- এমনটাই প্রত্যাশা করে ‘ক্যাম্পাস টু ক্যাম্পাস’ এর প্রতিটি সদস্য।


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়