ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

লাভ রোড-এ নেই ভালোবাসার চিহ্ন

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাভ রোড-এ নেই ভালোবাসার চিহ্ন

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় লাভ রোড

তেজগাঁও-বিজয় সরণি সংযোগ স্থলের পূর্ব পাশের সড়কের নাম ‘লাভ রোড’। নাম ভালোবাসার সড়ক হলেও সড়কের কোথাও নেই ভালোবাসার চিহ্ন! রাজধানীর অন্যান্য সড়কের সঙ্গে এই সড়কের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে না। অথচ সড়কের উভয় পাশে একসময় গোলাপ গাছ ছিল। প্রেমিক জুটিরও দেখা মিলত। ফলে ফুচকা, চটপটিসহ ভ্রাম্যমান দোকান বসত সড়কের দুই পাশে। আজ সেই দৃশ্য অতীত। তবুও মানুষের মুখে মুখে বেঁচে আছে সড়কের নাম।

সড়কের নামকরণ হয়েছিল প্রায় এক যুগ আগে। নামকরণ করেছিলেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক শফিক রেহমান। সড়ক ধরে কয়েক কদম হাঁটলেই পত্রিকার নান্দনিক ভবন চোখে পড়ে। যদিও এখন সেটি এইচআরসি মিডিয়া ভবন নামে দাঁড়িয়ে আছে। এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের দুই পাশে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট, আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, মিল্ক ভিটা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রধান কার্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই সড়কের পাশে। কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং টেলিভিশন চ্যানেলের কার্যালয় রয়েছে এই এলাকায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুরুতে সড়কে ‘লাভ রোড’ নামফলক ছিল। এটি ভেঙে গেছে। পরে আর সংস্কার করা  হয়নি। রাস্তার অনেকাংশ খানাখন্দে ভরা। স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় লাভ রোডের জন্য খোদ কর্তৃপক্ষেরই ভালোবাসা নেই! তাতে অবশ্য অনেকের কিছুই যায় আসে না। কারণ সড়কটি তাদের কাছে ভালোবাসার প্রতীক হয়ে আছে। তারা এই সড়কে যাতায়াত করার সময় এখনও প্রেম-ভালোবাসা, বিরহে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। যে কারণে তরুণদের মধ্যে সড়কটি নিয়ে কৌতূহলও রয়েছে।

এর উল্টো পিঠেই রয়েছে হতাশা আর ক্ষোভের গল্প। এলাকার প্রবীন দোকানি হাসমত মিয়া জানালেন ‘লাভ রোড’ একসময় ভালোবাসার প্রতীক ছিল। পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এখানে ছেলেমেয়েরা বেড়াতে আসত। এখন কেউ আসে না। অনেকে নামও জানে না। জানলেও চেনে না। কারণ সড়কের কোথাও নামফলক নেই।
 


লাভ রোডে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মাসুদ মিয়া। তিনি বলেন, প্রেম-ভালোবাসা অমর। যুগে যুগে কবি, লেখকরা বলেছেন- প্রেমের মরা জলে ডোবে না। সম্রাট শাহজাহান তাজমহল বানিয়ে ভালোবাসার মানুষ মমতাজকে অমর করে রেখেছেন। আবার ভালোবাসার আবেগেই ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল। ইতিহাসে ফিরে তাকালে এমন অনেক নিদর্শন মিলবে। সেই আবেগ থেকেই হয়তো লাভ রোড নামকরণ। তবে কোথাও নামফলক থাকলে ভালো হতো।

এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাশেই ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা ‘লাভ রোড’ নামেই জানি। অনেকে রাস্তাটি একনজর দেখার জন্য এখনও আসেন। বিশেষ করে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে অনেক ছেলেমেয়ে রাস্তার দুই পাশে আড্ডায় মেতে ওঠে। অনেকে আসে হৃদয়ে পুরনো স্মৃতি নিয়ে। যদিও তাদের জন্য এখানে কোনো আয়োজনই নেই। সিটি করপোরেশন চাইলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সরদার আলীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সড়কটি চেনেন কি-না? তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘চিনি তো বটেই! বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছি একাধিকবার। যদিও রাস্তাটির বিশেষত্ব কিছু নেই। কিন্তু নামকরণের মধ্যেই ভালোবাসার সার্থকতা রয়েছে।’

ছবি : আলিমুল

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়