ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফার্স্ট লেডি জুলিয়া টেইলরের যত বিতর্ক

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ২০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ফার্স্ট লেডি জুলিয়া টেইলরের যত বিতর্ক

ফার্স্ট লেডি জুলিয়া টেইলর

বিভিন্ন সময়ে অবিবেচকের মতো নানারকম মন্তব্য করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে হাসির পাত্র হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু ট্রাম্পই নয়, বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর দেশটির একক রাষ্ট্রপ্রধান বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত।

যুক্তরাষ্ট্রে শুধু প্রেসিডেন্টই নয়, প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর জন্যও রয়েছে অফিসিয়াল পদ। প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হওয়া থেকে বিভিন্ন জায়গায় প্রেসিডেন্টের পাশে দেখা যায় ফার্স্ট লেডিকে। তেমনি একজন ফার্স্ট লেডি দেশটির ১০ম রাষ্ট্রপ্রধান জন টেইলরের স্ত্রী জুলিয়া টেইলর। নানা কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বিতর্কিত ফার্স্ট লেডি হিসেবে পরিচিত।

জন এবং জুলিয়া টেইলরের বয়সের বড় ব্যবধান

প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জন টেইলর তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর জুলিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এটি ছিলো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু জন ও জুলিয়ার বয়সের ব্যবধানের কারণে অনেকেই জুলিয়াকে মেনে নিতে পারেননি। তাদের যখন বিয়ে হয় তখন জনের বয়স ৫৪ বছর এবং জুলিয়ার মাত্র ২৪। জুলিয়ার মা ছিলেন জনের ৯ বছরের ছোট। এমনকি জনের বড় মেয়ে ছিলো তার সৎ মায়ের ৫ বছরের বড়।

জুলিয়া টেইলর নিজেকে রানীর মতো ভাবতেন

জুলিয়া সবসময় রাজকীয় মনোভাব পোষণ করতেন। তার মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা আরো গাঢ় হয় ইউরোপের রাজকীয় পরিবারের জীবনযাপন দেখে। জুলিয়া হোয়াইট হাউসে আগতদের সামনে নিজেকে ‘কুইন জুলিয়া’ বলে পরিচয় দিতেন। জুলিয়া রাজকীয় পোশাক, অলংকারাদি এবং মাথায় শিরস্ত্রাণ পরতেন, যা দেখলে রাজমুকুটের মতো মনে হয়। এছাড়াও তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে যতটা সময় না দিতেন, তার চাইতে বেশি সময় দিতেন আধিপত্য বিস্তারে।

সৎ ছেলের প্রতি জুলিয়ার আসক্তি

পাঠক, এই বাক্যটি শুনে আপনি বেশ বড়সড়ো ধাক্কা খেলেও ব্যাপারটি আসলে তা-ই। পিতা একজন সিনেটর হওয়ার কারণে একবার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পুরো ফ্যামিলি যান হোয়াইট হাউসে। সেখানে জন টেইলর জুনিয়রকে দেখে তার প্রতি আসক্ত হন জুলিয়া। টেইলর জুনিয়রের পারিবারিক জীবন থাকা সত্ত্বেও তিনি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলেন। তার এই পরিকল্পনা যখন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে, তখনই জুলিয়ার সম্পর্ক মোড় নেয় জন টেইলরের সঙ্গে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর জন টেইলর তার এ সম্পর্ক পাকাপাকি করে নেন। অনেকেই মনে করেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জুলিয়ার মা তাকে জোর করেছিলেন।

বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে বিতর্কে জড়ান জুলিয়া

জুলিয়া অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করতেন। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় তিনি একবার হ্যান্ড ব্যাগের বিজ্ঞাপনে মডেল হন। নিউ ইয়র্কের অভিজাত শ্রেণীর একজন নারী হয়েও এ ধরণের বিজ্ঞাপনের মডেল সেখানকার মানুষ ভালো চোখে দেখেনি। উচ্চ শ্রেণীর নারী হয়েও তার থেকে নিম্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য হ্যান্ড ব্যাগের বিজ্ঞাপন করাটা মানুষের পছন্দ হয়নি। এটি ছিলো ১৮০০ দশকের নিউ ইয়র্কের উঁচু শ্রেণীর একজন নারীর জন্য রীতিমতো স্ক্যান্ডাল। তার বাবা যখন বিজ্ঞাপনটি দেখেন, তখন তিনি এটি মেনে নিতে পারেননি।

অনুষ্ঠানস্থলে দেরিতে প্রবেশ করতেন জুলিয়া

জুলিয়ার নামে বেশ কিছু স্ক্যান্ডাল ছিলো। এর অন্যতম কারণ ছিলো তার নিজেকে উপস্থাপনের ধরন। কোথাও প্রবেশের সময় মহা সমারোহে প্রবেশ করতে চাইতেন। কারণ তার মতো সুন্দরী সেখানে আর কেউ ছিলো না। তাই সকলেরই জানা দরকার ছিলো জুলিয়া প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। জুলিয়া ৮টি অ্যারাবিয়ান ঘোড়ার বহরে শহর প্রদক্ষিণ করতেন। বিভিন্ন ইভেন্টে সে কিছুটা দেরিতে প্রবেশ করতেন, যাতে অন্যরা তার আগমন নিয়ে কথা বলেন।

ছদ্মনামে নিজের সৌন্দর্যের প্রশংসা লিখতেন জুলিয়া

জুলিয়াকে নিয়ে সংবাদপত্রগুলো নানা অরুচিকর মন্তব্য ছাপাত। সাংবাদিকরা তার স্ক্যান্ডালের খোঁজে ব্যস্ত থাকতো। ফার্স্ট লেডি হওয়ার আগ পর্যন্ত জুলিয়া এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতো না। কিন্তু প্রেসিডেন্টকে বিয়ে করার পর এগুলো তার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন থেকে জুলিয়া সংবাদপত্রে ছদ্মনামে আর্টিকেল লিখতে শুরু করেন। এসব আর্টিকেলে সে নিজের সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিবাচক কথাবার্তা লিখতেন।

বিধবা ফার্স্ট লেডি জুলিয়া প্রথম স্বামীর পেনশন গ্রহণ করেন

১৮৬২ সালে তার স্বামীর মৃত্যু হয়। গৃহযুদ্ধের পরে সে তার সন্তানদের ছাড়া সবকিছু হারায়। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য জুলিয়া প্রথমেই তার অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খোঁজে। জুলিয়ার দুই পুত্রকে তিনি চাকরি জোগাড় করে দেন। তাছাড়া তিনি তার স্বামীর প্রেসিডেন্সির কারণে বিধবা হিসেবে তাকে পেনশন প্রদানের জন্য কংগ্রেসকে রাজী করান। প্রথম বিধবা ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি পেনশন গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী ফার্স্ট লেডিদের জন্য এই সুযোগ তৈরি করে দিয়ে যান।

সমাজের নিয়ম ভাঙার বাতিক ছিলো জুলিয়ার

সমাজের বিভিন্ন নিয়ম ভাঙার বাতিক ছিলো জুলিয়ার। তার স্বেচ্ছাচারিতা সম্পর্কে উঁচুতলার লোকে কে কী বললো এসবের তোয়াক্কা করতেন তিনি। যে পোশাক পরতে ভালো লাগত সেটাই পরতেন। তাতে শরীরের বেশি অংশ দেখা যাচ্ছে বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা তা কখনো ভাবতেন না জুলিয়া। তিনি স্লিভলেস পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। প্রায়ই এমন সব অলংকার পরতেন যা হাই সোসাইটির সঙ্গে খাপ খায় না।

 

ঢাকা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়