ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দুই বন্ধু রাষ্ট্রের একমাত্র স্মৃতির ধারক ‘মুক্তিমিত্র স্মৃতিস্তম্ভ’

ইমাম মেহেদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ১২ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:২৭, ১২ ডিসেম্বর ২০২০
দুই বন্ধু রাষ্ট্রের একমাত্র স্মৃতির ধারক ‘মুক্তিমিত্র স্মৃতিস্তম্ভ’

কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস বাসস্ট্যান্ড। পূর্ব ও দক্ষিণ দিক থেকে কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ। উত্তর-দক্ষিণ কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়ক। পূর্বে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক। আর এখানেই স্থান পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন আবেগ ছড়ানো ‘মুক্তিমিত্র’।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হন। ধ্বংস হয় কয়েকটি ট্যাংক ও একটি বিমান। তবে মিত্রবাহিনীর পাল্টা হামলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘কুষ্টিয়া চৌড়হাস যুদ্ধ’ একটি গুরত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র। এই যুদ্ধে নিহত শতাধিক সৈন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সহায়তাকারী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতেরই আধিকাংশ সৈন্য নিহত হয়। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই কুষ্টিয়া প্রবেশ করে মিত্রবাহিনী। যার ফলে ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর যে সব সদস্য শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও স্মৃতিস্বরূপ নির্মিত হয়েছে এই ‘মুক্তিমিত্র স্মৃতিস্তম্ভ’।

স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে রয়েছে মোট ৭টি ম্যুরাল। প্রথমেই রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীর প্রতিকৃতি। এরপর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের চিত্র, মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রতিকৃতি। এছাড়াও আলাদাভাবে রয়েছে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি, স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের চিত্র। যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক সংবলিত স্তম্ভসহ কুষ্টিয়া শহর হানাদার মুক্ত করতে গিয়ে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাঙ্কের উপর বিজয়োল্লাসিত উৎসুক জনতার ছবি। রয়েছে একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক চিত্র ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর প্রতিকৃতি।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ড চৌড়হাস মোড়ে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। উদ্যোগ নেওয়ার ২৫ বছর পর ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর তথাগত রায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথাগত রায় জানিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে আমি এই মুক্তিযোদ্ধাদের পবিত্র ভূমিতে পা রাখতে পেরেছি, স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করতে পেরেছি, এটা করতে পেরে আমি অভিভূত। অভিভূত বললে কিছুই বলা হয় না, একটা অসাধারণ আবেগ আমার মধ্যে উঠে আসছে। ১৯৭১ সালে আমরা রেডিওতে রোজ শুনতাম মুক্তিযুদ্ধ চলছে। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা শোনাতেন ভারতের দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশের এম আর আখতার মুকুল। তাঁদের কথা শুনে আমরা রোমাঞ্চিত হতাম। সেই অল্প বয়সে যে ভূমি আমাকে রোমাঞ্চ দিয়েছিল, আজকে এই বয়সে সেই ভূমিতে পা রাখতে পেরে আবার বলছি- অভিভূত। আপনাদের  দেশকে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি’ (প্রথম আলো, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫)।

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া এলজিইডি, কুষ্টিয়া পৌরসভা, বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ও ঢাকার আরমা গ্রুপ এবং বিভিন্ন ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত হয় ‘মুক্তিমিত্র স্মৃতিস্তম্ভ’। এর নকশা করেছেন ভাস্কর শিল্পী মনোয়ার হোসেন ডাবলু। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই বন্ধু রাষ্ট্রের একমাত্র স্মৃতির ধারক ও বাহক এই দৃষ্টিনন্দন ‘মুক্তিমিত্র স্মৃতিস্তম্ভ’।

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়