ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

তারাশঙ্করের প্রয়াণের ৫০ বছর

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
তারাশঙ্করের প্রয়াণের ৫০ বছর

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জীবনের শেষবেলায় কলম ধরেছিলেন কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছিলেন ‘১৯৭১’ উপন্যাস। সেখানে তিনি লিখে গেছেন সরল সমীক্ষণে ঐতিহাসিক ঘটনার মুহূর্ত।

তার মৃত্যুর পূর্বে যখন ‘সুতপার তপস্যা’ এবং ‘একটি কালো মেয়ের কথা’ বই দুটি প্রকাশের আলোচনা হচ্ছিল তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থার মধ্যেই বলেন, ‘দুটো বই এক হয়ে বেরোবে, তার নাম হবে- ‘১৯৭১’।

বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কথাসাহিত্যিকের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতায় মারা যান।

জন্ম ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে। বাবা-মায়ের নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রভাবতী দেবী। তারাশঙ্করের বাল্যজীবন কাটে গ্রামের পরিবেশেই। লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬সালে এন্ট্রান্স (প্রবেশিকা) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে (এখনকার আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। তবে স্বাস্থ্যভঙ্গ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া তার অসম্পূর্ণই থেকে গেছে।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হলেও যুবাবস্থায় জড়িয়ে পড়েন গান্ধীজির ডাকা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে৷ আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং কিছুদিন জেলও খাটেন। কিন্তু ওই কারাগারে থাকতে থাকতে তার সাহিত্য চর্চার প্রকাশ ঘটে। সেখানেই তিনি লেখা শুরু করেন ‘পাষাণপুরী’ আর ‘চৈতালী ঘূর্ণি’।

পরে রাজনীতির উপদলীয় কোন্দল ও সংঘাতের কারণে তিনি ক্রমশ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারান ৷ বেশি করে মন দেন লেখালেখিতে৷

১৯২৯ সাল থেকে ৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি তার কালজয়ী উপন্যাসগুলো রচনা করেছিলেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর ক্রমান্বয়ে তিনি রচনা করেন ‘রায় কমল’ (১৯৩৫),  ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৩৯), ‘কবি’ (১৯৪২), ‘গণদেবতা’ (১৯৪৩), ‘পঞ্চগ্রাম’ (১৯৪৪), ‘মন্বন্তর’ (১৯৪৪), ‘সন্দীপন পাঠশালা’ (১৯৪৬), ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’ (১৯৪৬), আর ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৬-৪৭)৷

লেখালেখির দিকে ঝুঁকলেও রাজনীতির ছোঁয়া তিনি এড়াতে পারেননি৷ ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন৷ ১৯৬০ সালে তাকে রাজ্যসভার সদস্য করে পাঠান হয়৷

 তার লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা।

সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার অজয় কর সহ বেশ কিছু পরিচালক তারাশঙ্করের লেখাকেই ভিত্তি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন৷

রাজনৈতিক জীবনকে অবশ্যই ছাপিয়ে গিয়েছিল তার লেখক স্বত্তা৷ তার সাহিত্য চর্চার ফসল হিসেবে পাওয়া যায় ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পের বই, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণকাহিনী ।

বিংশ শতাব্দীর এই লেখকের ঝুলিতে রয়েছে রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং পদ্মভূষণ খেতাব।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়