ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

একটি হিজল গাছের ‘মলাই’ হয়ে ওঠার গল্প

নাজমুল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২২:০৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
একটি হিজল গাছের ‘মলাই’ হয়ে ওঠার গল্প

হিজল গাছ।

‘হিজল বিছানো বন পথ দিয়া/ রাঙায়ে চরণ আসিবে গো প্রিয়া’- কাজী নজরুল ইসলাম হিজল ফুলের সুবাসে, ভালোবাসায় স্নিগ্ধ হয়ে এ ফুলে প্রিয়ার চরণ রাঙানোর কথা বলেছেন। পঙ্ক্তিমালায় তাঁর আকুতি পরিলক্ষিত হয়।

বলছি, চিরহরিৎ হিজলের কথা। এ গাছ চেনেন না, বা এর নাম শোনেননি- এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সৌন্দর্যভরা এই হিজল গাছ এখন আর গ্রামগঞ্জে তেমন একটা দেখা না গেলেও হারেঙ্গা বিলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির গল্প অন্যরকম।

তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলস্থ ছোট্ট একটি গ্রামের নাম ‘দেওড়া’। এই গ্রামের ঠিক পূর্বদিকে রয়েছে কয়েকটি বিলের সমন্বয়ে বিশাল এক হাওর। নামগুলোও বেশ শ্রুতিমধুর- হারেঙ্গা বিল, চিনাইখানী বিল ও মাইট্টাখালী বিল। রয়েছে নইরা, বাড়চর। আরও রয়েছে বাতাকাটা ও হুনাছায়ি মৌজার হাজার হাজার একর জমি। 

এই হাওরে গেলে প্রথমেই যেটাতে চোখ আটকে যাবে, সেটি হলো হারেঙ্গা বিলের ‘হিজল গাছ’। যদিও গাছটি আজ তার আসল নাম হারিয়ে ‘মলাই গাছ’ নামে সকলের কাছে পরিচিত। 

এই নামকরণের পেছনেও রয়েছে এক গল্প। জানা গেছে, ১৯৫৭ সালে গাছটি যখন রোপণ করা হয় তখন পাকিস্তানের ইস্কান্দার মির্জার শাসনামল ছিল। আর গাছটি রোপণ করেন মৌলভী মলাই মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন দেওড়াস্থ মোল্লাবাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। বর্তমান হিজল গাছের চারাটি ছিল মলাই মিয়ার বাড়ির পাশের নিজস্ব জমির আইলে। 

জনশ্রুতি রয়েছে, এই গাছের গোড়ার মাটি কেটে ভূমি থেকে পৃথক করতে সময় লেগেছিল ১০ দিন। কালের আবর্তনে ‘মলাই’ নামে গাছের নামটি মানুষের মুখে মুখে রটে যায়। সেই নামেই গাছটি এখনও টিকে আছে।  

স্থানীয়রা জানান, আনুমানিক চার বর্গ মাইলের মধ্যে একমাত্র ছায়াদানকারী গাছটি জেলে-কৃষকের বন্ধু। আর পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বর্ষায় যখন বিলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়, তখন ইতিহাসের সাক্ষী এই গাছটি শির উঁচু করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার গ্রীষ্মের কড়া তাপে কৃষক এ গাছের নিচে বসেই একটু স্বস্তি খুঁজে পান। 

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়