ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রমজানে বিলাসী ইফতার ও বাহারি খাবার: ইসলাম কী বলে 

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৮ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১২:২৩, ১৮ এপ্রিল ২০২২
রমজানে বিলাসী ইফতার ও বাহারি খাবার: ইসলাম কী বলে 

অফুরন্ত কল্যাণ ও নেকি অর্জনের মাস রমজান। রমজান রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস। রমজানে মানুষ সারাদিন অভুক্ত থাকে। হাতের কাছে মজাদার সব খাবার থাকা সত্ত্বেও সে মুখে দেয় না। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার এই অভুক্ত থাকা। অন্য অনেক ইবাদতে লোক দেখানো ব্যাপার থাকে। রোজা এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে, রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘বনি আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই। শুধু রোজা ব্যতীত; তা আমার জন্য। আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব।’ (সহিহ বোখারি)

রমজানে দিনের বেলা কিছু খাওয়ার বিধান নেই। কিন্তু ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত মানুষ যা খায়, স্বাভাবিকভাবে দিনের বেলা মানুষ এতো খায় না। রমজান এলেই পরিলক্ষিত হয় বিলাসী ইফতার আর বাহারি খাবারের নানা আয়োজন। পাশাপাশি এত খাবার কেনা হয় যে, রমজানে পণ্যদ্রব্যের টান পড়ে যায়। বাজারে হুড়াহুড়ি লেগে যায়। ক্ষেত্রবিশেষ ইফতারের সময় বাজারে ঢোকা কঠিন হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত ভোজ ইসলামে সম্পূর্ণ নাজায়েজ। পেটের এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি, এক ভাগ খালি রাখার কথা বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো তাঁর ইফতার। (তিরমিজি শরিফ)

রমজানে বেশি খাবার খেলে আল্লাহ কোনো হিসাব নেবেন না, এ ধরনের একটা কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু ইসলাম অতি ভোজ কখনোই সমর্থন করে না। এমনও হয়েছে, ঘরে খাবার নেই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না খেয়ে থেকেছেন। এই অবস্থায় তো আমরা পড়িনি। কম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। আর খাবারের অপচয় অপরাধ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান করো এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ তায়ালা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আরাফ :আয়াত ৩১)

অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। আর তোমাদের অর্থ সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রাখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ। (সুরা বনি ইসরাঈল :আয়াত ২৬,২৭)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আহার করতেন, আহার শেষে তিনবার আঙুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, তোমাদের খানার বাসন থেকে কিছু পড়ে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়ে নাও, তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দিও না। (আবু দাউদ) অথচ, বর্তমানে খাবারের অপচয় রমজানে রীতিমত যেন ফ্যাশন। রেস্তোরাঁ থেকে বস্তা বস্তা খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এমন ছবিও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। কত মানুষ এই শহরে অভুক্ত থাকে। পেট ভরে খেতে পায় না। তার খবর কতটুকু আমরা রাখি। গার্মেন্টসে যারা কাজ করেন তাদের দশজনে আটজন পেটে ক্ষুধা নিয়ে কাজ করে। পেট ভরে খেতে পারে না। গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায়। বাসার কাজের লোক, আপনার আমার মতোই মানুষ। তারও ক্ষুধা লাগে। তাকে খাবার না দেওয়া বা কম দেওয়া অন্যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের ভাইদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। এতএব, যার অধীনে কোনো ভাই থাকে, তাকে তাই খাওয়াবে যা সে নিজে খায়, তাকে তাই পরাবে, যা সে নিজে পরে এবং তাকে সাধ্যের অধিক কাজ চাপিয়ে দেবে না। তাকে দিয়ে যদি কোনো কষ্টের কাজ করাতে হয়, তাহলে তাকে সাহায্য করবে। (সহিহ বুখারিও মুসলিম)

দেখুন না, অধীনস্তদের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন আচরণ করতেন। প্রায় দশ বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্যে থাকা হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও বলেননি যে, এটা কেন করোনি বা এটা কেন করেছো। রমজানে কাজের লোকদের কাজের বোঝা হালকা করে দিতে হবে। হযরত সালমান ফার্সি (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে দাস-দাসীদের, কাজের লোকদের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ তাদের মাফ করে দেন এবং দোজখের আজাব থেকে নাজাত দান করেন। (মেশকাত, বায়হাকি) 

অতিভোজন যেমন রোজার উদ্দেশ্য নয়, তেমনি শুধু না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়। ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলা, নিজেকে সংশোধন করা ও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসর নামই রোজা। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা
 

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়