ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

সাদাকাতুল ফিতর-এর রহস্য কী?

প্রকাশিত: ১২:২৫, ২০ এপ্রিল ২০২৩  
সাদাকাতুল ফিতর-এর রহস্য কী?

খ্যাতিমান আরবী সাহিত্যিক মুস্তফা লুতফী মানফুলুতী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আন-নাযারাত’-এ চমৎকার একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, আমি গতরাতে কোথাও যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত হলো। সে নিজের হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? সে বলল, জনাব, সারাদিন কিছুই খেতে পাইনি। তাই ক্ষুদায় প্রচন্ড পেট ব্যথা করছে। আমি সাধ্যমত তার খাবারের ব্যবস্থা করে আমার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চললাম। 

কিছুদুর যেতেই দেখি আরেক ব্যক্তি পূর্বের ব্যক্তির ন্যায় পেটে হাত রেখে ব্যথায় কাঁদছে। তার কাছেও একই প্রশ্ন করলাম- কী হয়েছে? সে বলল, দুপুর ও রাতে উভয় বেলাতেই একটু বেশি খওয়া হয়েছে তো! এজন্য খুব পেট ব্যথা করছে। আমি তাকে ওষুধ খওয়ার পরমর্শ দিয়ে আগে চললাম। মনে মনে বললাম, হায় আফসোস! উভয় ব্যক্তি কষ্ট পাচ্ছে খাওয়ার জন্য। এক জন খেতে না পেয়ে, আরেক জন অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য। যদি দ্বিতীয় ব্যক্তি অতিরিক্ত না খেয়ে পূর্বের ব্যক্তিকে কিছু খাবার দিতো, তবে উভয়েই পরিমিত আহার পেতো। পরিণতিতে উভয়েই পেটের ব্যথা থেকে বেঁচে যেতো। কারো কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতো না। 

বর্তমান পৃথিবীতে এটাই বড় সমস্যা। কেউ আমরা অঢেল খাচ্ছি, জমা করছি। আর অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। ইসলামের যাকাত, ফিতরা, সাদাকাহ-এ সবই বৈষম্য দূরীকরণের জন্য। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘তোমাদের ধন-সম্পদ যেন বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত হয়ে না যায়’। (সূরা হাশর: ০৭) 

ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের এ নির্দেশগুলোর বিকল্প নেই। সাদাকাতুল ফিতরের মূল রহস্যটা এখানেই। সাদাকাতুল ফিতরের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মধ্যে বণ্টন করে দেয়ার চমৎকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য সাদাকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব বা আবশ্যকীয় করা হয়েছে। রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমাপ্রাপ্তিরও এটা এক মহা সুযোগ। 

প্রাজ্ঞ সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘নবী কারীম সা. সাদাকাতুল ফিতরের বিধান দান করেছেন রোজাদারকে অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কথা-কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাবারের ব্যবস্থা হিসেবে। যে ব্যক্তি তা (ঈদের) নামাজের আগে আদায় করবে সেটা গ্রহণযোগ্য সাদাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর যে (ঈদের) নামাজের পর আদায় করবে সেটা সাধারণ সাদাকাহ হবে।’ (আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬০৯)

কাজেই আসুন কোনো ধরনের কার্পণ্য ও অলসতা না করে যথাসময়ে ও যথা নিয়মে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকল ইবাদত কবুল করুন, আমীন।

বি. দ্র. সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় মাসআলা সহজভাবে বিস্তারিত জানতে পরবর্তী লেখাটির দিকে দৃষ্টি রাখুন।
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়