ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শ্রাবণ ঘনায় দু’নয়নে

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২ আগস্ট ২০২৩   আপডেট: ১৬:৪৮, ৩ আগস্ট ২০২৩
শ্রাবণ ঘনায় দু’নয়নে

নদীর পানিতে সূর্যের আলো-ছায়া। ছবি: লেখক

শ্রাবণ ঘনায় দু’নয়নে
আকাশের মত আঁখি
মগন বরিষণে
শ্রাবণ ঘনায় দু’নয়নে
                  -নচিকেতা চক্রবর্তী

নৌকার দাঁড়ের ছপ-ছপ শব্দ। এ যেনো মায়াবী বিকেল।আকাশে রোদ্র-ছায়ার খেলা। নদীর পানিতে সূর্যের আলো-ছায়া। দুই পাশে গাছের সারি। নদীর বুকে ভেসে যাচ্ছে নৌকা। গানে-আনন্দে উচ্ছ্বসিত নৌকার যাত্রীরা। দারুণ এক দৃশ্য। সুন্দর মুহূর্ত।

আরো পড়ুন:

তুরাগ নদী

হ্যাঁ, বলছিলাম এক বিকেলে নৌকা ভ্রমণের কথা। দিনটি ছিল রোববার (১৪ শ্রাবণ ১৪৩০)। অফিস শেষে আমরা (ইসমাইল, মাহি, ইভা, সুমি, সাইফ) বাসে  চলে গেলাম মিরপুর দিয়াবাড়ি হয়ে তুরাগ নদীর পাড়ে।

আবহাওয়া বেশ গরম। বাস থেকে নেমে আমরা ধুলো ও বিকট শব্দহীন স্বচ্ছ রাস্তায় যাচ্ছি নদীর ধারে। আমাদের সবার মুখে হাসি আর বেড়ানোর উচ্ছ্বাস। এ যেনো এক আনন্দঘন মুহূর্ত। একপাশে ইট-পাথরের যান্ত্রিক শহর, আর অন্যপাশে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির তুরাগ নদী। এখানে-ওখানে ফুটে আছে নাম না জানা ফুল। বাঁধের পাথুরে ব্লকগুলোয় ফাঁকে ফাঁকে সবুজ ঘাস জাল বিছিয়ে আছে যেন। পা মেলে একটু বসলেই ছুটে আসা ফুরফুরে বাতাস। প্রাণ জুড়িয়ে যায়।  এ যেনো অদ্ভূদ সুন্দর।

নৌকায় আমরা

আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম। রোদ আছে। হালকা বাতাস বইছে।নদীর তীরে অনেকগুলো নৌকা। অনেকেই সেই নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরছেন। অনেকেই আবার বসে নদীতে দৃশ্য দেখছেন।

তুরাগের তীরে দেখলাম বিভিন্ন রকম স্থাপনা। দোকান-পাট। কিছু রিসোর্টের মতো করে ছোট ছোট হোটেল। পাশে দেখলাম তামান্না পার্ক। সেখানে ভিড়। সেখানে রাস্তার ডান পাশে আবার চিড়িয়াখানা। সেখানে বোটানিক্যাল গার্ডেনের শেষাংশ এসে মিশেছে। সবুজে-সবুজে আচ্ছাদিত কোলাহল আর লোকালয়হীন একটি অনিন্দসুন্দর জায়গা। দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।  ঢাকার এত কাছে, এত অল্প সময়ে, জ্যাম-ধুলো-বালি আর কোলাহলহীন নিশ্চুপ জায়গা, ভাবতেই হারিয়ে যাই নতুন ভুবনে।

সবুজে-সবুজে আচ্ছাদিত একটি অনিন্দসুন্দর জায়গা

নদীতে নৌকা চলছে। আমরা বসে দেখছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানালেন, এখানে গাজীপুরের কড্ডা, মজলিশপুর, ভাওয়াল মির্জাপুর, সাকাশ্বর, চা-বাগান এলাকার তুরাগ নদের অংশ ও কালিয়াকৈর বাজারের চাপাইর ব্রিজ এবং বরইবাড়ি ও মকস বিলের বিভিন্ন অংশে প্রতিদিন নৌকা ভ্রমণে আসেন ভ্রমণ পিয়াসীরা। অনেকেই পরিবার নিয়ে আসেন। অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে আসেন, সব বয়সীরাই আসেন এখানে সময় কাটাতে।

সাড়ে তিনশ টাকা ভাড়ায় আমরা নৌকায় উঠলাম। ইসমাইল ভাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। মাহি গান গাইছে। সুমি ভিডিও করছে। ইভা পানিতে হাত দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে।

আমরা নৌকায় যাচ্ছি। পাশে আরেক কয়েকটি নৌকা যাচ্ছে। একটু পরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দেখলাম হাই ভলিয়মে গান বাজছে আর কয়েকজন নাচছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। নদীর নিস্তব্ধতা ভেঙে পাখিরা কলকালিতে মেতে উঠলো। সূর্যটাও  ক্লান্ত হয়ে ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে ঢ়লে পড়তে লাগলো। আমরা নৌকায় ঘুরছি। মাঝি আনন্দ ভাই দাঁড় টানছেন। নদীর পানিতে গোধূলির আলো ঝিকমিক করছে। আমরা সবাই নৌকা বসে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করলাম।

নৌকায় লেখক

যেভাবে যাবেন: মিরপুর বেড়িবাঁধ থেকেই নৌকায় ঘুরতে পারবেন। বেড়িবাঁধকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে বাঁশ ও কাঠের কাঠামোর ওপর দাঁড়ানো জলে ভাসা রেস্তোরাঁ। এসব রেস্তোরাঁর পাশে নৌকার ঘাট। ৫ জনের ছোট ডিঙি নৌকায় জনপ্রতি ১০০ টাকায় বেড়ানো যাবে ঘণ্টাব্যাপী। আর ৩০-৩৫ জনের বেলায় ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পুরো দিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। 

/এসবি/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়