ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রমজান: বিভিন্ন দেশে যেসব ঐতিহ্য পালিত হয়

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১২ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৩:০১, ১২ মার্চ ২০২৪
রমজান: বিভিন্ন দেশে যেসব ঐতিহ্য পালিত হয়

ইফতারের সময় হয়েছে-এই বার্তা দেওয়ার জন্য কোনো কোনো দেশে কামানে তোপধ্বনি দেওয়া হয়। আবার কোনো দেশে সেহরিতে সবাইকে ডেকে তোলার জন্য ঢোল পেটানো হয়। এক দেশের এক রীতি ইফতার ও সেহরির সংস্কৃতিকে দিয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। চলুন জানা যাক।

মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্ক। এই দেশে অটোম্যানদের মতো তুর্কিরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ‘দাভুল’ নামের বড় ঢোল পিটিয়ে সেহেরি খাওয়ার জন্য ডেকে তোলে। দুই দিকেই বাজানো যায় এমন ঢোল নিয়ে শহরজুড়ে ঘুরে ঘুরে বাজায় তারা। এর জন্য বখশিসও পান তারা। অনেক সময় সেহরিতে জেগে ওঠা মুসলিমরা তাদেরকে একসঙ্গে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করে। একই চর্চা আলবেনিয়ার রোমা মুসলিমদের মধ্যেও দেখা যায়। তারা ভেড়া বা ছাগলের চামড়ায় আবৃত লোদ্রা নামের ঐতিহ্যবাহী ড্রামের সঙ্গে বিশেষ গীতিনাট্য দিয়ে তারা রমজানে দিনের শুরু এবং শেষ করে থাকেন।

পড়ুন: শুরু হলো পবিত্র রমজান মাস, আজ প্রথম রোজা

মিশর ও জর্ডানে সেহরির আগে এলাকাভিত্তিক কিছু মানুষ প্রতিবেশীদের ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য ডাকেন, যাদের বলা হয় মেসাহারাতি। এরা আশেপাশের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে জাগিয়ে তোলে। ঢোলের মৃদু শব্দের সঙ্গে তারা ডেকে দেওয়ার কাজটি করেন।

মরক্কোতেও একই রীতি রয়েছে। সেহরিতে যারা ডেকে দেন তাদেরকে ডাকা হয় নাফারস নামে। এরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘গান্দোরা’, টুপি এবং একজোড়া চপ্পল পরে প্রার্থনার সুরে ধীর গতিতে হেঁটে হেঁটে লোকজনকে জাগিয়ে তোলে। সাধারণত শহরের লোকেরাই 'নাফারস' হিসেবে কয়েকজনকে নির্বাচন করেন। রমজানের শেষ রাতে নাফারসরা সম্মানীও পেয়ে থাকেন।

ধাতু ও রঙিন কাচ দিয়ে তৈরি উজ্জ্বল রঙের প্রদীপ জ্বালিয়ে রমজানকে স্বাগত জানানো হয় মিশরে। দেশটিতে ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে রাস্তা, বাড়ি এবং পাড়া এই লণ্ঠন দিয়ে আলোকিত করা হয়। স্বতন্ত্র নকশা এবং বিচিত্র কারুকার্যের জন্য পরিচিত লণ্ঠন বৈশ্বিকভাবে মিশরীয় রমজানের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

পড়ুন : রোজায় ব্যায়াম করার নিয়ম-কানুন

ইরাকে ইফতার করার পর আনন্দ করার জন্য ঐতিহ্যবাহী খেলা ‘মেহাবেস’বা আংটি খেলা খেলে দেশটির নারী  ও পুরুষ। বাড়ির বাইরে পুরুষরা এ ধরনের খেলার আয়োজন করে আর বাড়ির ভেতরে  নারীরাও এই খেলায় অংশ নিয়ে থাকে। ৪০ থেকে ২৫০ জন পর্যন্ত খেলাটিতে অংশ নিতে পারে। এসময় অংশগ্রহণকারীরা দুইটি দলে ভাগ হয়ে যায়। পালা করে একটি দল আংটি লুকিয়ে রাখে, এবং অন্যদলের সদস্যদের ধারণা করতে হয় যে আংটিটি কার কাছে আছে।

লেবাননে কামানে তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের সময় হবার বিষয়টি জানানো হয়। এটি প্রাচীনতম ঐতিহ্য। যা শুরু হওয়ার প্রায় ২০০ বছর পরও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ আজও এই চর্চা চালু রেখেছে। যা 'মিদফা আল ইফতার' নামে পরিচিত। 

রমজান শুরু হবার আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘হক আল লায়লা' নামের এক বিশেষ আয়োজন। শাবান মাসের ১৫ তারিখে শিশুরা রঙিন কাপড় পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যায়। এসময় তারা খারিতা ব্যাগে মিষ্টি সংগ্রহ করে এবং সুর করে বলে ‘আতোনা আল্লাহ ইউতিকোম, বাইত মক্কা ইউদিকুম’ যার অর্থ ‘আপনারা আমাদেরকে দিন, আল্লাহ আপনাদের পুরস্কৃত করবেন এবং মক্কা পরিদর্শনের তৌফিক দেবেন।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কুয়েতেও এটি পালন করা হয়। তবে এ অনুষ্ঠান রমজানের মাঝামাঝি সময়ে তিন দিনের উদযাপন। এ সময় শিশুরা তাদের আশেপাশের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে এবং মিষ্টি আর চকলেটের জন্য গান গায়। এই ঐতিহ্যটিকে ‘গারগিয়ান’ বলা হয়। .

তথ্যসূত্র: বিবিসি

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়