ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করুন

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৭ মার্চ ২০২৪  
আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করুন

কোকিল যেমন বসন্তের আপেক্ষায় প্রহর গুনে, ডাঙায় ওঠানো মাছ যেমন পানি পেতে চায়, প্রকৃত মুমিনও তেমনি রমজান মাস এর জন্য দিন-ক্ষণ গুনতে থাকেন। রমজান পেয়ে সে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করে মহান রবের ক্ষমা ও সন্তুষ্টি অর্জনের আশায়। হাজার বছর ইবাদতের মর্যাদা অর্জিত হয় এ মাসে এক রাতের ইবাদতের মাধ্যমে। এমন সুযোগ আর কোথায় মেলে!

এজন্য আগের যুগের ওলামাগণ দুই বুজুর্গের মর্যাদা নিরুপণ করতে খোঁজ নিতেন কে কয়টি রমজান পেয়েছেন। যিনি বেশি রমজান পেয়েছেন তিনি ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য জনের থেকে অবশ্যই বেশি হবেন। কাজেই তাঁর মর্যাদাও বেশি হবে।

রমজানের এই সুযোগ কাজে লাগাতে নিজেকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করতে হবে। নবীজী (সা.) রমজানে ইবাদত করার জন্য উম্মাহকে উৎসাহিত করেছেন এভাবে: অর্থ: উবাদা ইবনে সামেত (রা.) বর্ণনা করেন, একদা হুজুর (সা.) রমজানের কিছু পূর্বে আমাদেরকে বললেন, রমজান মাস আগত প্রায়। এটা বড়ই বরকতের মাস। আল্লাহ তা’আলা এ মাসে তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাছ রহমত বর্ষণ করেন। গুণাহ মাফ করে দেন। দোয়া কবুল করেন। এবাদতের প্রতি তোমাদের আগ্রহ দেখতে থাকেন এবং ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে সৎ কাজ দেখাও। হতভাগা ঐ ব্যক্তি যে এ মাসে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হলো। (তবরানী)

অন্য এক বর্ণনায় আবু ছাঈদ খুদুরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন: রমজানের প্রতি দিন-রাতে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম থেকে অসংখ্য কয়েদিকে মুক্তি দেন এবং ইবাদতকারী প্রতিটি মুসলমানের দিনে রাতে অন্তত একটি দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমাদ, তারগীব) 

উম্মতের জন্য এটা এক বিশাল সুযোগ। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত কা’আব ইবনে উজরা (রা.) বর্ণনা করেন, কোন এক সময় নবী কারীম (সা.) আমাদেরকে ইরশাদ করলেন, তোমরা মিম্বরের নিকটবর্তী হও। আমরা হাজির হলাম। অতপর নবীজী (সা.) যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা মুবারক রাখলেন বললেন, আমীন অর্থাৎ-আল্লাহ তুমি কবুল কর। আবার যখন ২য় সিঁড়িতে পা মুবারক রাখলেন, বললেন-আমীন। পুনরায় ৩য় সিঁড়িতে উঠে বললেন, আমীন। অতঃপর তিনি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা করে মিম্বর থেকে নিচে নামলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহ নবী! অদ্য মিম্বরে উঠার সময় যা শুনলাম ইতোপূর্বে তো এভাবে কখনও শুনিনি। নবীজী (সা.) বললেন, এইমাত্র জিবরাঈল (আ.) এসে বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমজান পেল অথচ তার গুনাহ মাফ হালো না। তাঁর এই দোয়ার সমর্থন করে আমি বললাম আমিন অর্থাৎ-আল্লাহ তুমি কবুল কর। দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিবরাঈল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার সামনে আপনার নাম উচ্চারণ করা হলো অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পাঠ করল না। আমি বললাম আমীন। তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেই সময় জিবরাঈল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে তার বৃদ্ধ পিতা মাতা অথবা এক জনকে পেল অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারলো না। তদুত্তরে আমি বললাম, আমীন অর্থাৎ- আল্লাহ তুমি কবুল কর। (মুসতাদরাকে হাকীম)

এসব হাদীস থেকে বুঝা যায় মাহে রমজান অযথা সময় নষ্ট করার মাস নয়। এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। প্রতিটি সময়কে কাজে লাগাতে হবে ইবাদাত-বন্দেগী, জীকির-আযকার, তিলাওয়াত, ইস্তিগফার, দান সদাকাহ, অপরের কল্যাণ করা ইত্যাদি নেক কাজের মধ্যে। প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় নিজের অতীত পাপের কথা স্মরণ করে কান্নাকাটি করা অপরিহার্য। নিজের ভুলের কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারী করা মুমিনের কাজ, আদম (আ.) ও তার সন্তানদের কাজ। আর নিজের অন্যায় স্বীকার না করে, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করা ইবলিস শয়তানের কাজ। সকল নবীগণ (আ.), সাহাবা (রা.) গণ সহ আল্লাহর সকল প্রিয় বান্দাগণ আজীবন নিজেদের গুনাহের কথা স্মরণ করে কেঁদে গেছেন। তাঁদের কান্নার ঘটনার শেষ নেই।

হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সম্মুখে কৃষ্ণকায় এক ব্যক্তি বসেছিল। সে নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে উচ্চস্বরে কাঁদতে আরম্ভ করল। এ সময় জিব্রাঈল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সামনে ক্রন্দনরত এই ব্যক্তিটি কে? তিনি জবাব দিলেন, এ হাবশাবাসী এক ব্যক্তি। নবীজী (সা.) তাঁর প্রশংসা করলেন। জিব্রাঈল (রা.) বললেন, আল্লাহ তা’আলা আমাকে বলেছেন, আমার ইজ্জতের শপথ, আমার বড়ত্বের কসম এবং আপন আরশের উপর আমার উচ্চাসনের কসম- দুনিয়াতে যেকোনো বান্দার চক্ষু আমার ভয়ে ক্রন্দন করবে আমি জান্নাতে তার হাস্যকে বৃদ্ধি করে দেব।

একদা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) তাহাজ্জুদের নামাজে কুরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। যাতে বলা হয়েছে: অর্থ: ‘তারা দেখতে পাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন শাস্তি যা তারা কখনও কল্পনাও করেনি’। (সূরা যুমার: ৪৭) আয়াতটি তিলাওয়াতের পর থেকে তিনি রাতে এমন ভাবে কাঁদতে শুরু করলেন কোনভাবেই আর সামলে নিতে পারছিলেন না। ফলে সামনের আর কোনো আয়াতই তিলাওয়াত করতে পারলেন না। এ আয়াতটি বার বার তিলাওয়াত করতে করতে রাত শেষ হয়ে গেল।

একটু চিন্তা করে দেখুন-উনি হলেন দুনিয়াতে থেকে বিশ্বনবীর মুখে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত একজন নারী। নবীজী (সা.) এর একজন প্রিয়তমা স্ত্রী। তাদের যদি পরোকালে শাস্তির ভয়ে এমন অবস্থা হয় তবে আমাদের কেমন হওয়া উচিত। আল্লাহ তা’আলা আমাদেকে মাহে রমজানে নিজেদেরকে তাঁর প্রতি সমর্পণ করে ইবাদত, তওবা ইস্তিফার ও গুনাহমাফির জন্য কান্নাকাটির মধ্যে কাটানো তৌফিক দান করুন। আমীন। 

/শাহেদ/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়