ঢাকা     শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হজের মূল পাঁচ দিন

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১৪ জুন ২০২৪   আপডেট: ১১:৩৭, ১৪ জুন ২০২৪
হজের মূল পাঁচ দিন

প্রথমে যারা মক্কায় যায় তারা হজ শেষে মদিনায় যায়। আর যারা মদিনায় যায় তারা মক্কায় গিযে হজ শেষে যার যার দেশে ফেরে। আমি প্রথমে মক্কায় গিয়েছিলাম। দেশ থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ১০ জুন, ২০২৩। ইহরাম বাঁধা অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মক্কায় গিয়ে প্রথমে ওমরাহ পালন করলাম। 

মক্কায় একটি হোটেলে ১০ দিন অবস্থান করেছিলাম। ওখানে থাকা অবস্থায় প্রায়ই কাবা শরীফে যেতাম, তাওয়াফ করতাম। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল জিলহাজ মাসের ৮তারিখে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন মিনায় উপস্থিত হতে হয়। ওখানে অনেক ভিড় হয় বলে মুয়াল্লিম (যারা হজ যাত্রীদের গাইড) আমাদেরকে সাত তারিখে মিনায় নিয়ে আসলেন যাতে আট তারিখে মিনায়  উপস্থিত থাকা নিশ্চিত হয়। মক্কা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে মিনা। মিনায় হাজিদের জন্য তাবু বরাদ্দ থাকে। হজের মৌসুমে পুরো মিনা তাবুর শহরে পরিণত হয়। কাফেলা অনুযায়ী এক একজনের তাবুর নাম্বার দেওয়া থাকে সেই নাম্বার অনুযায়ী নির্ধারিত তাবুতে ঢুকে গেলাম। তাবুর ভেতরে দুই/আড়াই ফিট বাই পাঁচ ফিটের মতো ফোমের কভারযুক্ত বেড দেওয়া হয়। এগুলো এমন যে কেউ যদি লম্বায় একটু বড় হয়ে যায় তাহলে তার পা আরেকজনের বেডে লাগার উপক্রম হয়। তবে সেখানে পযাপ্ত পানি এবং পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের ব্যবস্থা ছিল। বড় বড় ফ্রিজভর্তি পানি এবং কোমল পানীয় রাখা থাকে। যাতে হাজিদের কোনো সমস্যা না হয়। ওই পরিবেশে ওখানে আট তারিখে থাকলাম।

আরো পড়ুন:

এরপর নয় তারিখে ফযরের নামাজের পরে আমরা আরাফাত ময়দানের দিকে রওনা করলাম। নিয়ম অনুযায়ী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করতে হয়। ময়দানেও তাবু দেওয়া আছে। তাবুতে হাজিরা অবস্থান করেন। ওখানে মসজিদে নামিরায় যোহর এবং আসর নামাজের মাঝামাঝি সময়ে দুই ওয়াক্ত মিলিয়ে এক আকামতে দুই রাকাত, দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা হয়। যেটাকে কসর নামাজ বলা হয়। নামাজ শেষে খুতবা হয়। এরপর সবাই মসজিদ থেকে বের হয়ে ছোট ছোট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে যার মতো মোনাজাত করেন।

সন্ধ্যায় ওখান থেকে হাজিরা রওনা দেন মুজদালিফার দিকে। ওখান থেকে মুজদালিফার দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। ভিড় ঠেলে এগোনো যায় না বললেই চলে, সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে রাত তিনটায় মুজদালিফায় পৌঁছালাম। ওখানে মাগরিব এবং এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। এবং এখান থেকে শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করতে হয়। তারপর খোলা আকাশের নিচে বিশ্রাম নিতে হয় বা শুয়ে থাকতে হয়। হজের এই অংশটা জীবন সমপরকে গভীর ধারণা দেয়। এমন যে— ‘আসলে তুমি কিছু না। এই পৃথিবীতে তোমার যত ধন, দৌলত, শান, শওকত যত যা কিছুই করো না কেন, তুমি এই মাটির মানুষ এই মাটিতেই শুয়ে আছো। আর কোনো কিছু নাই।’

ফযরের আজান পড়লো।ওখানেই আমরা নামাজ পড়লাম।তারপর আবার হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় বারো কিলোমিটার হেঁটে জামারাহ পৌঁছলাম। ওখানে পৌঁছে কাজ হলো বড় শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপ করা। আরাফাত ময়দানে আমাদেরকে আরবের ট্রেডিশনাল খাবার ‘খেপসা’ দেওয়া হয়েছিল। অনেক মসলাদার খাবার, অনেকটা কাচ্চির মতো। আমাদের পক্ষে খাওয়া একটু কঠিনই ছিল। আটচল্লিশ- পশ্চাশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে প্রচুর তীষ্ণার্ত আর ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। প্রাই বাইশ বোতল ইনটেক পানি পান করেছিলাম। এর বাইরে কত পানি পান করেছিলাম হিসেব নেই।

জামারাহ থেকে মক্কায় এসে আমাদের কাজ হলো কোরবানি দেওয়া। কোরবানির জন্য আগেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রেখেছিলাম।ওরাই সব করে। এরপর একটা ম্যাসেজ পাঠায় যে— কোরবানি হয়ে গেছে।

নিয়ম অনুযায়ী কোরবানি হয়ে যাওয়ার পরে আমরা মাথার চুল ফেলে দিলাম। এরপরের কাজ হচ্ছে তাওয়াফ করা। যা হজের অংশ। তখন সন্ধ্যা। আমরা একবার তাওয়াফ করলাম। তাওয়াফ করতে করতে অনেকে মক্কায় থেকে যায়। কারণ আবার শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপ করতে যেতে হয়। মক্কায় থেকে এই নিয়ম পালন করলে একটু আরামে করা যায়। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে মিনায় চলে যাওয়া। আমরা যথারীতি মিনায় চলে আসলাম, তখন রাত প্রায় দুইটা। এরপর আবার তাবুতে অবস্থান নিলাম।

পরের দিন আবার মিনা থেকে হেঁটে জামারায় গেলাম। সেখানে শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপ করালাম। দ্বিতীয়বারে তিনটা শয়তানকেই সাতটা করে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। তাই করলাম। এরপর মিনায় ফেরত আসলাম। পরের দিন আবার জামারায় গিয়ে তিন শয়তানকে সাতটা-সাতটা করে পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে হজের মূল কারযক্রম শেষ করলাম। এরপর আমরা আবার হেঁটে মক্কায় আমাদের হোটেলে ফিরে এলাম।

এরপরের কাজ হচ্ছে বিদায়ী তাওয়াফ। মক্কা থেকে যখন আমরা একেবারে চলে আসবো তখন কাবা শরীফ তাওয়াফ করে হজ শেষ করা হলো।বিদায়ী তাওয়াফ করার সময় হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে উঠেছিল।

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়