ঢাকা     শুক্রবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৮ ১৪৩১

ফিলিস্তিনের বুকে ছড়িয়ে রয়েছে ‘ইসরায়েল সেটেলমেন্ট’

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১০:১০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ফিলিস্তিনের বুকে ছড়িয়ে রয়েছে ‘ইসরায়েল সেটেলমেন্ট’

ফিলিস্তিনের বুকে ছড়িয়ে রয়েছে ‘ইসরায়েল সেটেলমেন্ট’।ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বের ১৩৮টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও দেশটি এখনও জাতিসংঘের সদস্য হতে পারেনি। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে এক অ-সদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে রেখেছে। অথচ অটোমান সম্রাজ্যের যুগে ফিলিস্তিন ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ এক দেশ। অটোমান সম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে পর্যায়ক্রমিক এক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে ১৯৪৭ সালে।

ব্রিটিশদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমি থেকে নির্ধারিত ৪৫ শতাংশ ভূমির মালিকানাটুকুও ঠিকমতো পায়নি। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়। এই ঘটনাকে তারা ‘নাকবা’ নামে উল্লেখ করে। যার অর্থ বিপর্যয়।

সেই সময় ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনের প্রায় ৭৭৪টি এলাকা দখল করে নেয়। যার মধ্যে ৫৩১ এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে। এতে প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি মারা যায়। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মিশর, ইরাক, জর্ডান, সিরায় এবং লেবানন সম্মিলিতভাবে ইসরায়েল আক্রমণ করে। যা ১৯৪৭ সালের আরবি-ইসরায়েল যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধে উল্টো ইসরায়েলই লাভবান হয়। তারা ফিলিস্তিনের বাকি অঞ্চলগুলোও দখল করে নেয়। যে জায়গাটুকু তারা দখল করতে ব্যর্থ হয় সেসব জায়গা মিশর এবং জর্ডান ভাগাভাগি করে নেয়। গাজা উপত্যকা মিশরের অধীনে আসে আর জর্ডান পায় পশ্চিমতীর। এই অঞ্চল জর্ডান নদীর পশ্চিমপাশে অবস্থিত হওয়ার কারণে জায়গাটি পশ্চিম তীর হিসেবে পরিচিত। 

আরো পড়ুন:

১৯৫৬,৬৭, ৭৩ এবং ৮২ সালে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের আরও বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়েছে। এসব যুদ্ধেও ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগই জুটেছে।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৬দিনের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত এই যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিমতীর এবং মিশরের কাছ থেকে গাজা ও সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় ইসরায়েল এবং মিশর ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি সই করে। এর মাধ্যমে মিশর তার হারানো জায়গা ফিরে পায়। 

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের যেসব জায়গা দখল করেছিল সেসব জায়গায় ইহুদি বসতি গড়ে তুলতে শুরু করে। এসব বসতি ইসরায়েল সেটেলমেন্ট হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিমতীর এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সেটেলাররা জমি দখল করেই চলেছে। ইসরায়েল সেটেলমেন্টগুলো সম্পূর্ণ বেআইনি।

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমের ১২টি সহ সমগ্র পশ্চিমতীরে ১৪৪টি ইসরায়েলি সেটেলমেন্ট রয়েছে। এর বাইরেও প্রায় ১৫০টি সেটেলমেন্ট ইসরায়েলি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে। এগুলোকে হিব্রু ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘মাহাজ’। যার অর্থ অবৈধ।

ইসরায়েলি সরকার ইহুদিদেরকে সেটেলমেন্টগুলোতে বসবাসের জন্য উৎসাহিত করে। সস্তায় বাড়ি পাওয়ার জন্য কিংবা ধর্মীয় কারণে এসব জায়গায় ইহুদিরা বসবাসে আগ্রহ দেখায়। কেউ ইসরায়েলে ভূখণ্ড বড় করার জন্য নিজে নিজে মাহাজ গড়ে তোলে। ৭ লাখেরও বেশি ইসরায়েলি সেটেলার অবৈধভাবে ফিলিস্তিন অংশে বসবাস করে। নিজেদের দখল করা জায়গায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ ঠেকানোর জন্য উঁচু উঁচু দেওয়াল তুলে দেয়।

লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়